
শুক্রবার (২৫ই ডিসেম্বর) স্কুল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রাক্তনরা এসে অংশ নেন। দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণায় কিশলয় স্কুল মিলনমেলায় রূপ নেয়।বক্তব্য, আড্ডা আর স্মৃতিচারণায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা হারিয়ে যান প্রায় তিন দশক আগে তাদের কৈশোরের আনন্দ-উচ্ছ্বল দিনগুলোতে।কিশলয় আদর্শ শিক্ষা নিকেতন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮০ সালে। আলহাজ্ব চৌধুরী মু. তৈয়ব এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতায়।
পিছিয়ে পড়া জনপদের এই স্কুলে জেলার অনেক খ্যাতিমান শিক্ষক শিক্ষকতা করেন তিনি । স্কুলের সুনামের কারণেই অনেক দূর-দূরান্ত থেকেও শিক্ষার্থীরা এসে এখানে পড়াশোনা করেছেন। সেসব কৃতী শিক্ষার্থী আজ দেশ-বিদেশে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু পড়াশোনায় নয়, খেলাধুলা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেও এই স্কুল ‘বাতিঘর’ হিসেবে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে আজও আলো ছড়িয়ে দিয়েছে।এ সময়ের প্রয়োজনে ২-৩ দশক আগে স্কুলটিতে ভোকেশনাল শাখাও চালু করা হয়েছে। বেড়েছে স্কুলটির ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা আর পরিধি রয়েছে। সেই স্কুলের ১৯৮৮-২০২০ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের দিনব্যাপী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় শীতের সকালের ৮টায় মিষ্টি রোদের আবাহনে।
পবিত্র কোরআন তিলওয়াতের মাধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এরপর স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক, যারা লোকান্তরিত হয়েছেন তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। তুলে দেয়া হয় প্রতিষ্টাতা আলহাজ্ব চৌধুরী মু. তৈয়বসহ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের হাতে সম্মাননা স্মারক। আমন্ত্রিত মেহমানদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়ার পাশাপাশি অতিথি ও শিক্ষকদের শুভেচ্ছা স্মারকও উপহার দেওয়া হয়েছে।
এসময় সেখানে পরিচালনা কমিটির সদস্য ছাড়াও স্কুলের কর্মরত শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রথমবারের মতো সম্মাননা ও ভালোবাসা পেয়ে কিশলয় প্রতিষ্টাতা ও সাবেক প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব চৌধুরী মু. তৈয়ব তাঁর বক্তব্যে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি সবার সুস্থতা কামনা করে নিজের জন্য দোয়া চেয়ে কিশলয়কে বাঁচিয়ে রাখার অনুরোধ জানান। সংবর্ধিত শিক্ষক আলহাজ্ব চৌধুরী মু. তৈয়ব বলেন, একজন শিক্ষক তাঁর ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে এইটুকু সম্মাননাই শুধু আশা করে। যে শ্রদ্ধা আর ভালবাসা তোমরা আমাকে দিয়েছ, তাতে মনে হচ্ছে আমার শিক্ষকতার জীবন আজ পূর্ণ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন,এই গ্রামীণ জনপদে এই ধরনের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান সত্যিকার অর্থেই একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
গ্রামের সঙ্গে, স্কুলের সঙ্গে দূর-দূরান্তে থাকা মানুষের যোগাযোগ, নাড়ীর টানকে আরো শক্ত করবে এই আয়োজন। তিনি শিক্ষার্থীদের সুন্দর ও মঙ্গলময় জীবন সাফল্য কামনা করেন ।
অপরদিকে সম্মাননাপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কিপ্রাছাস আহবায়ক খালেদ মুর্শেদ হিরু।তিনি বলেন যে , এই শিক্ষককরা আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছেন তাই নিয়েই আমরা জীবনের পথে চলছি। তাদের নীতি-নৈতিকতার শিক্ষাই আজ আমাদের জীবনের পাথেয় সাফল্যরূপ । আমাদের জীবন সেই অর্থে এই শিক্ষকদেরই দান। তাদের সম্মানিত করার সামর্থ-সাধ্য আমাদের নেই। তাদের সম্মানিত করে আমরা নিজেরাই সম্মানিত ও গৌরবান্বিত বোধ করেছি।
কিপ্রাছাস সদস্য সচিব ইসমাইল সাজ্জাদের সঞ্চালনায় অনুষ্টানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহম্মদ বলেন, আমি নিজে এই স্কুলের ছাত্র নই। তবে কিপ্রাছাস কতৃক আয়োজিত এই স্কুলে পুনর্মিলনী করে সবার জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।
আশা করি সবাই , আগামী দিনে এভাবে আরো অনেকে এগিয়ে আসবে ইনশাআল্লাহ । এ ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য সবার জন্য সবসময় আমার পক্ষ থেকে দরজা খোলা থাকবে। পরে তিনি প্রতিক্ষা ২০২০ সালের স্মারকের মোড়ক উম্মোচন করেন।
বিকেল ২টা থেকে শুরু হয় দ্বিতীয় অধিবেশন। এখানে শুধু প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এ সময় সবাই নিজেদের মতো করে স্মৃতিচারণা, আড্ডা আর ছবি তোলায় মেতে উঠেন।
বিদেশ থেকেও অনেক প্রাক্তন বার্তা পাঠিয়ে আয়োজনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন এবং মঙ্গল কামনা করেন।
পরিসংখ্যায় প্রাক্তনরা অভিমত ব্যক্ত করেন, এই স্কুল ও এলাকার প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে একটি কার্যক্রম শুরু করার ব্যাপারে একমত হন। অনুষ্টানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ