
প্রাচীনকালে বালির সঙ্গে প্রস্রাব মিশিয়ে উত্তপ্ত করে ডায়াবেটিস সনাক্ত করা হতো।আবার অনেক সময় মাটির পাত্রে প্রস্রাব রেখে দেখা হতো কোন তলানি পড়ে কিনা বা পিপঁড়া আসে কিনা।কিন্তু বর্তমান ডায়াবেটিস সনাক্তকরণ অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে।বর্তমান আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্য অত্যন্ত সুনিপুনভাবে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নির্ণয় করে ডায়াবেটিস সনাক্ত করা হয়।ডায়াবেটিস সনাক্তকরণের আধুনিক পদ্ধতি নিম্নরূপ –
১,যদি ডায়াবেটিস উপসর্গ দেখা দেয় এবং দিনের যে কোন সময় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ২০০মি.গ্রা./ডে.লি এর বেশি থাকে।
২,যদি সকালে নাস্তার পূর্বে গ্লুকোজের মাত্রা ১২৬মি.গ্রা./ডে.লি এর বেশি হয়।OGTT(Oral Glucose Tolerance test)এর মাত্রা যদি দুই ঘন্টার ব্যবধানে ২০০ মি.গ্রা./ডে.লি এর বেশি হয় তবে ডায়াবেটিস উপস্থিতি নির্দেশ করে।
ডায়াবেটিস হওয়ার কারণসমূহ
১.পেশী কোষ ও চর্বি কোষের ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা কমে যাওয়া।
২.ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যাওয়া।
৩.লিভার বা হতে গ্লুকোজে নি:সরণ।
উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও ডায়াবেটিস হওয়ার আরও কিছু কারণ রয়েছে। কারণসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হল:
১.বংশগত কারণ ২.অতিরিক্ত ওজন
৩.ভ্রান্ত খাদ্যাভ্যাস ৪.কম শারীরিক পরিশ্রম।
ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর জটিলতা
ডায়াবেটিস এমন এক ভয়াবহ রোগ যা শরীরে আরো অনেক রোগ ও জরিলতার সৃষ্টি করে।ডায়াবেটিস আমাদের শরীরে যেসব রোগ ও জটিলতার সৃষ্টি করে তা সংক্ষিপ্ত আকারে নিম্ন দেয়া হল-
১.হৃদরোগ -ডায়াবেটিস রোগীর হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি একজন সুস্থ ব্যক্তির চেয়ে ২-৪ গুণ বেশি।
২.স্ট্রোক- ডায়াবেটিস রোগীর স্ট্রোকের আশংকা স্বাভাবিক ব্যক্তির তুলনায় অনেক বেশি।
৩.উচ্চ রক্তচাপ- প্রায় ৭৩% ডায়াবেটিস রোগীর রক্তচাপ ১৩০/৮০ mmHg এর বেশি থাকে।
৪.অন্ধত্ব- ডায়াবেটিসের কারনে চোখের রেটিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রোগীর দৃষ্টিশক্তি কমে যায় বা অনেক অকাল অন্ধত্ববরণ করে যাকে Diabetic Rethinopqthy বলে।
৫.কিউনি রোগ- ডায়াবেটিস কারনে বৃক্কের নেফ্রন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অনেকের ডায়াবেটিসসের প্রয়োজন হয়।একে Diabetic Nephropathy বলে।
৬.স্নায়ুরোগ – প্রায় ৬০-৭০% ডায়াবেটিস রোগীর নিম্নাঙ্গের প্রান্তীয় স্নায়ুরুজ্জু ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এতে হাত অথবা পা অবশ হয়ে যায়। অনেকের খাদ্য হজম প্রক্রিয়া মন্থর গতি সম্পন্ন হয়ে যায় এবং অন্যান্য স্নায়ুরোগ দেখা দেয়,যাকে
Diabetic Neuropathy বলে।
৭.দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত- ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষত বিশেষ করে নিম্নাঙ্গের ক্ষত দেরিতে শুকায়।ক্ষত শুরু হয় বিশেষ করে পায়ের তালুতে,বৃদ্ধাঙ্গুলে।
৮.দাঁতের রোগ- ডায়াবেটিসের কারণে মাড়ির নানার রোগ হয় এক-তৃতীয়াংশ ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে মাড়ির রোগ বা Periodontal Disease দেখা যায়।
৯.গর্ভাবস্থায় জটিলতা – ১৫-২০% ডায়াবেটিক মহিলার ক্ষেত্রে গর্ভাপাতের ঘটনা ঘটে এবং প্রসবের সময় বাচ্চা বা মায়ের মৃত্যু ঝুঁকি থেকে যায়।