
প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের ব্যবহৃত গাড়িটি এখনো খোলা আকাশে কোদালা চা বাগানে, ফেরত না নেওয়া কী পাকিস্তানের কূটনৈতিক ব্যর্থতা? -১
লিখাঃ এনায়েতুর রহিম, সম্পাদক, পাক্ষিক রূপালী রাঙ্গুনিয়া পত্রিকা।
মিষ্টার ই.কে ডেন্টন কোদালা চা বাগানে ম্যানাজার হিসাবে ২০.১০.১৯৫৯ সালে সুদূর ইংল্যান্ড থেকে যোগদান করেন। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানা কর্ণফূলী নদীবেষ্টিত বৃটিশদের আদি চা বাগান সর্ব ইউরোপে প্রসিদ্ধ ছিল।
মিষ্টার ই.কে ডেটন ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ও পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাকির হোসেন তিন জনই কাকতালীয়ভাবে ছিল ক্লাসমেট ও ঘনিষ্ট বন্ধু।
মি ডেটন ২৭.৯.১৯৬২ সাল পর্যন্ত কোদালা চা বাগানে কর্মরত ছিলেন। তিনি শক্তিশালী ল্যান্ড ফোন ব্যবহার করতেন সুদূর বৃটেনে রাউডারের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল। এই রাউডার নিয়ে হয়তো পরে বিস্তারিত লিখবো।
জাকির হোসেন ১৯২৩ সালে indian police sarvice কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪৩ সালে কলকাতা বন্দর শিপিং মাষ্টার নিযুক্ত হন। পরে কলকাতার এসপি। ১৯৪৭ সালে ১৪আগষ্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পরই পূর্ব পাকিস্তানের পুলিশ ইন্সপেক্টর জেনারেল পদমর্যাদা লাভ করেন। ১৯৬০সালে ১৪ই আগষ্ট আইয়ুব খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান কেন্দ্রিয় সরকারের central Minister for home & Kashmir officer of Pakistan দাযিত্বপ্রাপ্ত হন।
জাকির হোসেনের ২য় বিবাহ করেন ১৯৪৯ সালে সিন্ধি রমনী বেগম ইকবালকে। তিনি প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের বোন ছিলেন। বেগম ইকবালের নামে রাঙ্গুনিয়াতে একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন গর্ভণর জাকির হোসেন।
মিষ্টার ডেটন, জাকির হোসেন ও আইয়ুব খান তিন জনই কলকাতায় গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করেছেন এবং লেখাপড়া পাঠচুকিয়ে কর্মজীবনে আড্ডায় ব্যস্ত সময় সোনালি দিন অতিবাহিত করেছেন।
১৯৬২ খ্রীষ্টাব্দে আইয়ুব খান রাঙ্গুনিয়াতে এসেছিলেন এবং বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রাঙ্গুনিয়া স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠায় উদ্বোধনের পরে কোদালা চা বাগানে রাত্রিযাপন করেন।
কোদালা চা বাগানে ভ্রমন নিয়ে পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় একমাস আগে জাপান থেকে পাকিস্তান প্রেসিডেন্টের জন্য খোলা জীপ আমদানি করে চট্রগ্রাম বন্দর হয়ে নৌপথে রাঙ্গুনিয়া কোদালা চা বাগানে নিয়ে আসেন।
মি: ডেটন গাড়িটি রিসিভ করেন। কোদালা চা বাগানকে বিভিন্নভাবে প্রেসিডেন্টের ভ্রমন ও রাত্রিযাপন পরিদর্শন খুবই গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। তার সাথে সফরসঙ্গী ছিলেন পাকিস্তানের শিল্পপতি লতিফ ভাওয়ানী ও দাউদখান। যারা জাকির হোসেনের অনুরোধে রাঙ্গুনিয়াতে কর্ণফুলী জুট মিল, ভাওয়ানী মিল প্রতিষ্টা করেছিলেন।
৬২ সাল থেকে ২১। প্রায় ষাট বৎসরের একটি পুরানো ইতিহাস ধূলোর আস্তরনে গাছ তলায় খোলা গাড়িটি বৃটিশ বাংলোর নীচে পড়ে আছে জীর্ণশীর্ণ ভাবে।
যে খোলা জীপে আইয়ুব খান কোদালা চা বাগানে ঘুরে বেড়িয়েছেন সে গাড়িটি পাকিস্তনি সৈন্য ও জেনারেলরা বাঙ্গালিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় গাড়িটি ব্যবহার করেছিলেন। গাড়িটি বাঙ্গালিদের বিরুদ্ধে ব্যাথাদীর্ণ, অত্যাচার অনাচারের একটানা ইতিহাস।
দেশ স্বাধীন হলো। পাকিস্তানের তখতে কত নবাব, নাজির, উজিররা ক্ষমতায় বসলেন কিন্তু সেই শখের গাড়িটি পাকিস্তান স্বরাষ্ট মন্ত্রনালয় ফেরততো দুরের কথা বেমালুম ভূলে গেছেন। পূর্ব পাকিস্তানের রক্ষকর্তারই সেই গাড়িটির কথা ভূলে গেলেন। বর্তমানে গাড়িটি বানর, হনুমানেরা প্রকৃতিডাকে সাড়া দেন।