
সাহসী এক নারীর নাম জান্নাতুল ফেরদৌস কেমি। সে কক্সবাজার সরকারি কলেজ এর ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। বহু প্রতিভার অধিকারী এবং অন্যায়ের প্রতিবাদকারী মেধাবী এই শিক্ষার্থী আজ ছিনতাইকারীর হাতে রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। ১২ নভেম্বর ২০২০ তারিখে সে তার নিজের ফেসবুক আইডিতে রাস্তা ঘাটে নারীদের লাঞ্ছিত হওয়া নিয়ে প্রতিবাদস্বরূপ স্ট্যাটাস দিয়েছিল। তার স্ট্যাটাসে নির্দিষ্ট ভাবে নাইক্ষংছড়ি ও গর্জনিয়ার টমটম চালকদের হাতে প্রতিনিয়ত ইভটিজিং এর শিকারের বিষয়টি উঠে এসেছে। পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
নতুন অভিজ্ঞতা জীবনের। লেখাপড়ার জন্য রেগুলার কক্সবাজার একা যাতায়াত করি আমি। রাস্তাঘাটে কেউ কখনো চোখ তুলে তাকায় না পর্যন্ত।আমি কাউকে অসম্মান করি না, আমাকেও কেউ অসম্মান করে না।নিজের মতোই চলি সবসময়। যখন বান্ধবীরা রাস্তাঘাটে চলাচলের সমস্যার কথা বলতো, আমি ভাবতাম কোথাও হয়তো তাদেরও ভুল আছে? কিন্তু না! যে জন্মস্থানে আমি ২০ বছর ধরে হাটছি সে জন্মস্থানে আমাকে মানুষরূপী কুত্তার আওয়াজ শুনতে হয়েছে! আমি এতো স্ট্রিট একজন পথচারী হয়েও যদি কুত্তারা আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ঘেউ করে ওঠে, না জানি এতো এতো মেয়ে, যারা শিক্ষার জন্য, কাজের জন্য এই রাস্তায় চলাচল করছে প্রতিদিন, তাদের কতকিছু না শুনতে হয়! কতো লাজুক তারা! কাঁচের পুতুলের মতো কতো পর্দা করে, পরিপাটি হয়ে বের হয়! তাদেরকে কি এ কুকুরগুলো একটুও ভয় পাবে? কখনো না আজ দু’দিন হলো টিউশনে যাওয়ার পথে বেশ কয়েকটা কথা শুনতে হয়েছে। লক্ষ্য করলাম, প্রায় সময় টমটম চালকের পাশের সিটে বসা যাত্রীরা মেয়ে দেখলেই বেড সাউন্ড দিয়ে যায়। হয়তো তারা ভাবে যে, “গাড়িতো চলছেই, তাদের নাগাল আর কে পাবে? তাই যা ইচ্ছে বলে দেওয়া যাবে। শুধু মেয়ে হলেই হলো।”
কিন্তু না। আপনারা ভুল ভাবছেন। যে হাত নত হতে জানে, সময়ের প্রয়োজনে সে হাত উঠতেও জানে। আমি ‘কেমি’, কখনোই কোন মেয়েকে অসম্মান হতে দেখতে পারি না।এ দুই দিন অনেক কষ্টে এসব হজম করেছি । আপনারা যারা ড্রাইভার আছেন, আপনাদের আমি খুব সম্মান করি।আপনাদের শ্রমকে সম্মান করি।আপনারা আমার সম্মানবোধকে ভেঙে দিবেন না প্লিজ। বিশেষ করে নাইক্ষ্যংছড়ি, গর্জনীয়ার যেসব টমটম ড্রাইভাররা আছেন, যাত্রী তোলার সময় বলে দিবেন “মানুষ হিসেবে সম্মান করতে না পারলেও তারা যেনো কোনো মেয়েকে অসম্মান না করে।” আজ এই ছোট্ট চাকুটা কিনলাম। তবে কোন মেয়ের অসম্মান হতে দেখলে আমার একেকটা হাত এরকম হাজারটা চাকুর সমান হবে। অনেক অভিভাবক স্বাধীন বাংলা ৭১ কে জানান আমরা (অভিভাবক) মেয়ে সন্তান স্কুল কলেজের যাওয়া পথে নিরাপত্তাহিনতায় রয়েছি। প্রতিনিয়ত ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছে স্কুল কলেজে পড়ুয়া মেয়েরা। তাই এসব ইভটিজিং কারিদেরকে প্রশাসনের নজর দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।