
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধের ক্ষণ ঘনিয়ে আসছে দিনে দিনে। প্রতিযোগীও দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই হাড্ডা হাড্ডি লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে কিভাবে সংগ্রাম করতে হবে। এই লেখাটি বিশ্ববিদ্যায়ে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষত গ্রামের সাহসী এবং স্বপ্নালু মেয়েদের জন্য যারা সাধারন জীবন যাপন করে কিন্তু ভেতরে ভেতরে তাদের মধ্যে বারুদ জ্বলে, আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে ঘুমাতে যায়।
নিজেকে দূর্বল নারী না ভেবে সম্ভাবনাময়ী একজন প্রগতিশীল নারী হিসেবে কল্পনা করে, কল্পনার ভিড়ে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে না পেরে ভোর হতে না হতেই স্বর্গীয় ঘুৃম ছেড়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে ভোরের আলোয় স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য চেয়ার টেবিলে বসে পড়ে। ঠিক এভাবেই জেগে উঠো, স্বপ্ন দেখো। ইন্টারনেটের যুগে সবার হাতেই মুঠোফোন আছে এটাকে বিনোদন হিসেবে না নিয়ে এটাকে কাজে লাগাও, যদি সত্যিকার অর্থেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখ, টার্গেট ঠিক রেখে মোবাইল ফোনের ইন্টারনেটকে একজন পথ প্রদর্শক হিসেবে বেছে নিতে পারো।
গুগুল/ইউটিউবের সাহয্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলো ঘুরে আসো। কল্পনা করো সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন একটিতে তুমি ভর্তি হয়ে ক্লাস করছ, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছ, খেলাধুলা করছ, চ্যাম্পিয়ান হচ্ছ, জ্ঞানী ব্যাক্তিদের সানিধ্যে থেকে নিজের জ্ঞান চর্চাকে আরো ধারালো করছ, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পোগ্রামে অংশ নিচ্ছ। প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর জন্যই ভর্তি প্রস্তুতির সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে অনেকে পড়াশোনা করে নিজের মেধাটাকে শাণিত করে আবার অনেকে ঝড়ে যায়। সারাদিন রাত পড়াশোনা করলেই হবে না। পড়াশোনা একটা কৌশল, অনেকেই বুঝতে পারে না কিভাবে পড়াটাকে গুছিয়ে নিবে। আমি বিশ্ববিদ্যায়ে ভর্তি পরীক্ষায় ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছিলা। সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই বলছি।
প্রথমে আমি যে কাজটি করেছিলাম বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যায়ের বিগত সালের সব প্রশ্নগুলো পড়েছিলাম। বিসিএসের প্রশ্নব্যাংক কিনে সেগুলো আয়ত্তে নিয়েছিলাম। যেহেতু মানবিকের ছাত্রী ছিলাম হাতে গোনা কয়েকটা নিয়ম ছাড়া বাকি ম্যাথগুলো স্কিপ করে যেতাম। অল্পকিছু ম্যাথ জানতে হয় কিছু কিছু বিশেষ ইউনিট আছে সেগুলোর জন্য। মানবিকে তেমন ম্যাথ আসে না। বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান থাকে। তবে নতুন সিলেবাস অনুযায়ী সাধারন জ্ঞান বাদ দিয়ে আইসিটি এই তিন বিষয়ের উপর জোর দিতে হবে। সবচেয়ে বেশি পড়তাম ইংরেজি তারপর বাংলা কারণ এদুটো সিলেবাস সারাজীবন অপরিবর্তনীয়। এমনভাবে এ দুটোর উপর দখল নিয়েছিলাম যেন এখানকার কাটস মার্কগুলো মিস না হয়।
তারপর সাধারণ জ্ঞান। বাংলা সাহিত্যের জন্য একাদশ শ্রেনীর বাংলা ১ম পত্র বইয়ে যতজন লেখকের গল্প কবিতা রয়েছে সবগুলো ধারনা রাখতে হবে। দশম শ্রেনীর লেখক পরিচিতি মুখস্ত করেছিলাম। আমি কবি সাহিত্যিকের জন্ম মৃত্যু সাল মনে রাখতে পারতাম না। কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ রাইটার সিলেক্ট করেছিলাম যাদের জন্ম মৃত্য সাল বার বার দেখতাম। বাংলা ২য় পত্রের জন্য নবম-দশম শ্রেনীর বোর্ড বইটা ভালো করে পড়েছিলাম। ইংরেজির জন্য সিলেবাস ধরে গ্রামাটিক্যাল আইটেমগুলো একটা একটা করে বই থেকে পড়েছি। প্রশ্ন যেখান থেকেই হোক আপনার কাছে পরীক্ষার হলে মনে হবে এটা পরিচিত। যে বিষয়গুলো আমার মুখস্ত রাখতে কষ্ট হতো সেটা বার বার পড়তাম।
আইসিটির জন্য একাদশ শ্রেনীর আইসিটি বোর্ড বইটি ভালোভাবে পড়লেই আশা করা যায় ভালো কিছু হবে, বার বার রিভিশন দিতে হবে রিভিশনের কোন বিকল্প নেই। সব কথার শেষ কথা নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। পড়তে পড়তেই বোঝা যায় কোন কৌশল অবলম্বম করা উচিত। অনেক বেশি পড়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলো বার বার পড়তে হবে। কারণ অনেক বেশি পড়ে ভুলে যাওয়ার চাইতে কম পড়ে মনে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। নিজের পড়া নিজেকেই গুছিয়ে নিতে হবে। আশেপাশের মানুষ নিরুৎসাহিত করতে চাইবে।ককারো কথায় কান না দিয়ে লক্ষ ঠিক রেখে এগিয়ে গেলে সফলতা এসে ধরা দিবে ইনশাআল্লাহ। ফাতেমা সাঈদ সাবেক শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া