
এস চৌধুরী, কাপ্তাই, চট্টগ্রাম– বাংলাদেশ জাতীয় টিমের ফুটবল খেলোয়াড় গ্লোডেন বয় খ্যাত শাহনাজ উদ্দীন টিপুর ফুটবল এর হাতে খড়ি খেলোয়াড় গড়ার কারিগর কর্ণফুলি প্রকল্প উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাবু হরেন্দ লাল নন্দীর হাতে। কাপ্তাই কর্ণফুলি প্রকল্প উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ থেকেই উঠে এসেছেন তিনি।স্থানীয় উপজেলা টুর্ণামেন্ট এ নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন। বাবা শমসের নূর এর চাকুরির সুবাদে কাপ্তাই এ প্রকল্প এলাকায় জন্ম তার।তিন ভাই দুই বোনের মাঝে তিনি তৃতীয়।
অত্যান্ত হাস্যজ্জল অমায়িক স্বভাবের লোক তিনি।স্ট্রাইকার পজেশানে সুচতুরভাবে গোল করার দক্ষতায় তিনি গ্লোডেন বয় নামে পরিচিতি লাভ করেন।বিশেষত অমিমাংশিত খেলার অতিরিক্ত সময়ে গোল করার প্রবনতা থেকেই তিনি গ্লোডেন বয় নামে খ্যাতি লাভ করেছেন। কর্ণফুলি প্রকল্প উচ্চ বিদ্যালয়ে (কাপ্তাই) তার পড়া লেখার হাতে খড়ি। তিনি চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে ফাস্ট ডিভিশন ফুটবলার হিসাবে টানা কয়েক বছর নিয়মিত খেলেছেন। তার পর তার টাই হয় জাতীয় টিমে।
এক সময়ের দাপুটে এই ফুটবলার স্কুল ফুটবল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ফুটবল সবই খেলেছেন। ১৯৯৯ সালের সাফ গেমসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। আর সেই গেমসের সেমিফাইনালে টিপুর একমাত্র গোলেই ফাইনালে ওঠেছিল বাংলাদেশ। ১৯৯৪ সালে প্রথম বিভাগের দল ঢাকা ইস্কাটনে পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন। পরের বছর তাকে দেওয়া হয় অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। প্রতিদান হিসেবে করেছিলেন ওই মৌসুমের সর্বোচ্চ গোল। আর এই সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পরেই ১৯৯৬ সালে ব্রাদার্স তাকে দলে বেড়ায়। ওই মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন টিপু।
১৯৯৬ সালের শেষের দিকে প্রথম বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক ফুটবল টূর্নামেন্টে আবাহনীর হয়ে খেলেন। মালয়েশিয়ার লাল দলের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক গোলও করেছিলেন। ১৯৯৭ সালে আবাহনীতে যোগ দেন। ২০০৮ সালে এসে ক্যারিয়ার থেমে যায় ইনজুরিতে। মোহামেডানে (যদিও ইনজুরির কারণে খেলা হয়নি) নাম লিখিয়ে খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টানেন। প্রায় ২৫টির মতো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। সবমিলিয়ে গোল ১০টির মতো। আন্তর্জাতিক ফুটবলে টিপুর স্মরণীয় স্মৃতির বেশিরভাগই ১৯৯৯ সালের সাফ গেমসকে ঘিরে। সেমিফাইনালের গোল তাকে গোল্ডেন বয় তকমা লাগিয়ে দেয়।
জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজ’ই প্রথমে তাকে এই উপাধিতে ভূষিত করেছিল। পরবর্তীতে অন্য মিডিয়াগুলো তা অনুসরণ করে। টিপু যে দলেরই হয়ে খেলেছে, ওই ‘গোল্ডেন গোলে’র সময়ের বেশির ভাগ গোল টিপুই করেছিলো। যার কারণে ‘গোল্ডেন বয়’ উপাধিটা পাওয়া! তবে শুধু ‘গোল্ডেন বয়’ই নয়, লাকি প্লেয়ার, সুপার সাবস্টিটিউটও বলা হতো তাকে। কেননা বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নামা বেশিরভাগ ম্যাচেই গোল করেছেন টিপু।
কিছু খেলোয়াড় আছে, যাদেরকে গেম চেঞ্জার বলা হয়, তাদেরকে শেষের দিকে মাঠে নামানো হয়, এবং তারা অল্প সময়েই মাঠে নেমেই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়, খেলার ধারাই পাল্টে দেয়। টিপু তাদের একজন। ঢাকার লীগে খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচেই গোল। ১৯৯৪ মওসুমে লীগে ১১ গোল, ৯৬ তে ৬ গোল, ফুল টাইম খেলা এদেশের অনেক স্ট্রাইকাররাও এতো গোল পায় না। ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তাঁর প্রায় একক নৈপুন্যের গোলে আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হয়।
Shahaj Uddin Tipu প্রথম বাংলাদেশ দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন ১৯৯৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে। এই অঞ্চলের বিশ্বকাপ খ্যাত সাফ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচে যার গোলে প্রথম বার চাম্পিয়ন হয়েছিলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের একমাত্র ফুটবলার যাকে “গোল্ডেন বয় “খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (BFF) এর বিভাগীয় কোচ এর দায়িত্বে রয়েছেন। ফুটবল তাকে সম্মানের শিকড়ে নিয়ে গেলেও আর্থিক স্বচ্ছলতা দেয়নি বলে আক্ষেপের শেষ নেই তার।দুই সন্তানের জনক গ্লোডেন বয় স্ত্রী সাজুকে নিয়ে সুখেই রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।