
স্যোসাল মিডিয়া এখন সোরগোল একটি বিয়ে নিয়ে।দুইটি পরিবারকে নাস্তানাবুদ করার মালমসল্লা ভালই জোগান হচ্ছে ঘন্টায় ঘন্টায়। আপডেট খবরের কৌতুহলী মনের উঁকিঝুঁকি বাড়ছে।কী হবে শেষ ওভারে?টানটান উত্তেজনায় সরব এখন পুরো দেশ! আমার কথা হচ্ছে আমাদের কি এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ নেই?কেন এদের কথা বারবার মিডিয়ায় এনে বিখ্যাত,কুখ্যাত বানানো বা করানো হচ্ছে?এসবের জন্যই কি মিডিয়ার সৃষ্টি?প্রত্যেকের জীবনের উত্থান পতন আছে।স্রষ্টার চোখে সব ধরা আছে।একেবারে ক্যামরাবন্দী!কেউ পার পাবে না।নিজের কৃতকর্মের দায়-দায়িত্ব নিতেই হবে।
এখনতো রীতিমতো বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেল ব্যাপারটা।দু’কলম লেখা জরুরী মনে হলো।আজেবাজে টপিক নিয়ে লিখি না।সারগর্ভ শিক্ষণীয় কিছু বের করে আনার প্রচেষ্টা করি বারবার লেখার মাঝে।না হয় সে লেখা অর্থহীন অযথা সময় নষ্ট বৈ আর কিছু নয়।এবার আসল কথায় আসি।জীবনের চাওয়া পাওয়া নিয়ে বিশ্লেষণ করবো আজ তথ্য উপাত্ত, উদাহরণ সমেত। টেলিফোন প্রথম যিনি আবিস্কার করেছেন, তিনি তাঁর প্রয়োজনের তাগিদেই আবিস্কার করেছেন বলে আমি বিশ্বাস করি।আগে নিজের স্বার্থ পরে অন্যেরটা। হ্যালো! বলে যে সম্বোধন করি আমরা,তিনি সেই আবিস্কারকেরই প্রেমিকা ছিলেন। ফেসবুকের সুবাদে অনেকেই এটা জানেন আশা করি।তাঁর প্রিয়তমার সাথে কথা বলবার ব্যাকুলতা,দূরে থাকার কষ্ট লাগব করতে তিনি তারে তারে কথা বলার ফর্মূলা বানিয়েছেন এবং এটাই সত্যি।পরে জগতজুড়ে খ্যাতি।
পৃথিবী আরেকবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে এই আবিস্কারে।এখন কথা হলো প্রেম না হলে কোন কিছুতেই সুন্দর সৃষ্টি সম্ভব নয়।প্রকৃতি কিংবা মানুষ মাত্রই প্রেমে মত্ত,ধ্যানে মগ্ন।সৃষ্টি হচ্ছে যুগান্তকারী আবিস্কার। ভালোবাসা আর নিষ্ঠার ফল এটি।ঠিক একটি সন্তানও তেমন করে সৃষ্টি হয়।জোর জবরদস্তিতে নয়,আপোষের বিয়েতে অবশ্যই।তামিমা রাকিবের আট বছরের তুবাও সেই ভালোবাসারই সৃষ্টি। সিজারিয়ান বেবি!একজন মা কী কষ্ট করে সন্তান পেটে রাখেন,জন্ম দেন তা শুধু তিনিই জানেন।এই ব্যথার এক অংশও কেউ সহ্য করবে না।স্রষ্টার এ অপার বিষ্ময়!আর সেই সন্তানকে ফেলে নেচে গেয়ে মিডিয়া তোলপাড় করে মা আবার বিয়ে,হানিমুন করে এ নারী জাতির লজ্জার বিষয়।মায়ের জাতকে তামিমার মতো নারীরা চরম অসম্মান পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে।এ সামাজিক চরম অধঃপতন।তার সেই নাচানাচির ভিডিও আমিও দেখছি আর আমার ছেলেও দেখেছে।সে বড় হয়েছে। হাতে মোবাইল,দেখা স্বাভাবিক। সে আমাকে এসে বলে,”মা ক্রিকেটার নাছির আরেকজনের বউকে বিয়ে করে ফেলছে ট্রিলিয়ন ভিউয়ার দেখেছে,তার নাকি একটি মেয়েও আছে”।আমি হতবাক!আমি তখনও কিন্তু জানতাম না।কাজে কর্মে লেখালেখিতে ব্যস্ত ছিলাম, চোখে পড়েনি আমার।হঠাৎ করেই আমার চোখে জল চলে আসলো।কারণ আমার জীবনের সাথে অনেককিছুই মিলে গেল যে!ছেলেকে বিদায় দিয়ে দেখলাম সব ভিডিও রাত জেগেই।ওদের সামনে দেখা সম্ভব না।স্বামীও বকাবকি করবে।বাধ্য হয়েই রাতে।দেখছি আর কাঁদছি।
আমার বিয়েটাও ঘটা করে হয়নি।মনে অনেক দুঃখ পার্লারে গিয়ে বউয়ের সাজ সাজতে পারিনি,বেনারসি পড়ে মজা করতে পারিনি।একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়েই নতুন জীবন শুরু করলাম! এসব কথা আমার লেখা প্রবন্ধ” আত্মকথা” তে সবিস্তারে জানানো আছে।এখন এসবের জবাব দেয়ার মতো সময় নেই,খুবই ব্যস্ততা।লেখকদের নিয়েও অনেকের কৌতূহল থাকে স্বাভাবিক।বারবার ইনবক্স করেন পাঠক ভক্তগণ,আমার ব্যক্তিগত জীবনযাপন নিয়ে।বাধ্য হয়েই অনেকটা আত্মজীবনী লেখা শুরু করেছি।জীবনটাও একটি বাঁক দাঁড় করানো উপন্যাস।যাই হোক পরিস্থিতি তামিমা রাকিবের মতোই ছিল।সংসার করছিলাম নিছকই অনিচ্ছায়।মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা,বিয়েটা ধরে রাখবার প্রচেষ্টা।জ্ঞানের আলো আমাকে পথ দেখায়।ধৈর্য ধরতে শেখায়।পরিশ্রমী হতে শেখায়।অলস,বিলাসী জীবনকে বিদায় দিলাম।আমার ঘর আলো করে প্রথম সন্তান ছেলে এলো।সে কী কষ্ট!ভেবেছি জীবনে আর কখনোই দ্বিতীয় সন্তান নেবো না।বাপরে!এতো কষ্ট বেবি হতে!তারপর মানসিক অত্যাচার শুরু।ছেলেও বড় হয়।এরই মাঝে চাকরীও হয়ে গেল।সমানতালে চলছে সব।তখন মাত্র ইন্টার পাশ আমি।পড়ালেখা বন্ধ,জোরপূর্বক।শাস্তি স্বরূপ। আমার খারাপ লাগতো আমার এক পুরুষ কলিগ বারবার আমার লেখাপড়াকে ছোট করতো,যতই আমি ভাল পড়াই না কেন।মনে মনে আমার জেদ উঠে গেল।আমি যতক্ষণ মাস্টার্স হোল্ডার হবো না ততক্ষণ ওর পাশের চেয়ারে আর বসবো না।বসেছি তবে সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী হয়েই।তিনি এখন আমাকে দেখলে চোখ সরিয়ে ফেলেন।আমি বুঝি তিনি এখন অনুতপ্ত, সেদিনের আমার প্রতি তার সেসব খারাপ আচরণ,অবমূল্যায়নের জন্য।খারাপ সময় আজীবন থাকে না
ধৈর্যের সাথে সংগ্রাম করে যেতে হবে।আমি তো অন্যায় করছি না,ভয় পাওয়ার কিছু নেই।সাহস আর অধ্যবসায়ে জীবন সুন্দর করতে বাধ্য।কথায় আসি,স্বামী আর শ্বশুর ঘরের কড়াকড়ি কোন লেখাপড়া চলবে না।চাকরী করতে দিয়েছে এই অনেক বেশি।আমার দুঃখ কষ্ট ওরা বুঝেনি।আমি চুরি করেই একদিন শহরে গিয়ে ভর্তি হয়ে এলাম।কাউকেই বলিনি।স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে,কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়াশোনা গোপনে চলছে।পরীক্ষা এসেছে!এখন তো পড়তেই হবে।সারাদিন কাজকর্ম করেই গভীর রাত পর্যন্ত পড়তাম।সকালে আবার সংসারের যাবতীয় কাজ সেরে স্কুলে যেতাম। বাঁধার পর বাঁধা আমাকে দমাতে পারেনি।নিজের টাকায় কারো সাহায্য ছাড়া সব ডিগ্রী অবশেষে সফলতার সাথে অর্জন করলাম,বিধাতার অশেষ মেহেরবান,সার্পোটে!আমি আকাশ থেকেই সাহায্য চাই বারবার।তিনি নিরাশ করেন না চাওয়ার মতো চাওয়া হলে তিনিও দিয়ে দেন।আমার অনেক সুযোগও ছিল।চাইলেই এই দুর্বিষহ জীবনকে টা টা দিয়ে চলে যেতে পারতাম।পারিনি শুধুই আমার সন্তানের দিকে তাকিয়ে।কখনোই পারব না।
এই হলো একজন মায়ের আদর্শিক জীবন।লেখালেখিতেও সে কারণেই আসা।বাজে চিন্তা থেকে দূরে থেকে সৃষ্টিশীলতায় মগ্ন থাকি,ইবাদত করি।প্রবাসী স্বামী!লোকে মুখরোচক অনেক কথায় বলে।এসবে কর্ণপাত নেই।কারণ একটাই আমার স্বামীর চেয়ে সন্তানদের জীবন গড়ে দেয়া আমার বড় দায়।রক্তের দায়,গর্ভে নেয়ার দায়!এড়াই কেমনে?যদি সত্যিকার সুবোধ সম্পন্ন স্বশিক্ষিত জ্ঞানী হয়ে থাকি!তামিমাদের চিন্তা ভাবনার সাথে আমাদের এখানেই আকাশ পাতাল ফারাক।টাকা আর দুনিয়ার সুখ স্বাচ্ছন্দ্য সেলিব্রেটি হতে এদের এসব নাজায়েজ আয়োজন।ইহকাল পরকাল শুধু তুবা মেয়েটার অভিশাপে জ্বলবে তামিমা -নাছির।ভাবছেন,আমি লোভী।ছেলে মেয়ের কামাই খাওয়ার জন্য এসব করছি?এই ধারণাও ভুল।রিজিকের মালিক খোদা,কোন মাধ্যম আর হতেই পারে না।আমার পরবর্তী প্রজন্মেরও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রাখে বিধায় তারা আমার পেটে এসেছে,অদ্ভুত ম্যাকানিজম লীলায় বিধাতার। তারাতো স্রষ্টারই প্রতিনিধি!একই গড়ন,সতেজ প্রাণ! তুবাও তামিমার গর্ভের সন্তান।চোখের সামনে সে কেমনে জাগতিক লোভে কাতর হয়ে মেয়েকে ফেলে এমন গর্হিত কাজ করলো?সৃজিত মিথিলাও কি মেয়ে সঙ্গে নিয়ে বিয়ে করেনি?একমুহুর্তের জন্যও তো মিথিলা তার মেয়ের হাত ছাড়েনি।স্যালুট পাওয়ার যোগ্য সে।জামাইয়ের সাথে যাই হোক সন্তানের সাথে সম্পর্ক অটুট রাখতেই হবে।
এতো নিজ গর্ভে তিলেতিলে বড় করা সন্তান!কোটি টাকা দিলেও কি আমরা তামিমা হবো?কখনোই না এবং না।সম্পদ বলেন,বেঁচে থাকার অক্সিজেন বলেন, সবই আমাদের সন্তানরা।সে একবারও ভাবলো না, তার এই নির্লজ্জতা তার মেয়ে কতটুকুইবা নিতে পারবে?বাকীটা জীবন তার কেমন কষ্ট জ্বালা নিয়ে সে বাঁচবে,বড় হবে?তুবা বলে,তার বুক ব্যথা করছে এখন।হঠাৎ তার মাকে চিরিদনের জন্য হারিয়েছে সে,চোখের সামনে সে ঘটনা দেখেছে।বুক তো ব্যথায় টনটন করবেই।আর তামিমার মাও চরম খারাপ,লোভী একজন মহিলা।মেয়েকে সময়ের সাথে গা ভাসিয়ে দিতে এমন মায়ের পেটে যেন কোন সন্তান জন্ম না নেয়।রাকিব বউকে লেখাপড়া করিয়ে,স্বাধীন জীবন দিয়ে, চাকরী করতে দিয়ে চরম বোকামীর পরিচয় দেয়নি শুধু এটি অনেকের জন্য শিক্ষণীয়ও বটে।রাকিবের অবাধ স্বাধীনতা দেয়া কখনোই উচিত হয়নি।এ কেমন ভালোবাসা আমার প্রশ্ন জাগে।বউ তো বউ।কোন পণ্য নয়।যেখানে সেখানে আমার স্বামীও যেতে দেয়না।নিরাপত্তার কাতিরে।সন্দেহ পরের বিষয় আগে আমি সেইফ কি না প্রবাসে বসে একশবার ভাবে।কারণ আমি তার বউ।সব দায় দায়িত্ব তার।সে খুবই এলার্ট থাকে এ ব্যাপারে।আমি আগে রাগারাগি করতাম,এখন ওকে বুঝি।তাই আমিও পারতপক্ষে কোথাও যাই না।নেহায়েতই দরকার হলে অনুমতি নিয়ে বের হই।এই তো স্বামী স্ত্রীর বিশ্বাসের বন্ধন।
সে কি আমাকে দেখছে ওখান থেকে আমি করছি না করছি?আমি জানি উপরে একজন সদা আমাকে পাহারা দিচ্ছেন,দেখছেন।তাঁর থেকে পার পাওয়া যাবে না।নিজেকে এভাবেই কন্ট্রোল করতে হয়।বেশি পন্ডিত হলে জীবনের বারোটা বাজে অবশেষে। বেশি চাওয়া,চাহিদা সুখের মাতম মানুষকে চরম অবক্ষয়ে নিয়ে যায়।মানুষ আর তখন বোধসম্পন্ন থাকে না।
আজ আমার স্বামীও ফোন করে এই প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যেতে চাইলো।বললাম,দেখো কী অবস্থা।ওখান থেকে বসে বসে কেবল আমাকে বকাবকি করো,ঝগড়া করো।শান্তিতে কথাও বলো না।কোন সাহিত্য সংগঠনেও যেতে দাও না।সাহিত্যের প্রতি টান বেশি আমার।তবুও ভালো জায়গায়ও যেতে দাও না।তবুও আমরা টিকে গেলাম সংসার নামক খাঁচার ভিতর।মেনে মেনে তবুও বদনাম শুনতে হয়।সে আমাকে বারবার বলে,না পোষালে চলে যাও।আমি তো পারিনা আমার বুকের মানিকদের ছেড়ে চলে যেতে!এ অসম্ভব!হয়তো ছেলেমেয়েরা আমাদের ছেড়ে চলে যাবে একদিন কর্মের জায়গায়,নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদে,ভালো থাকতে।যে যার মতো থাকতে চাইবে।এটাও স্বাগত জানাই।প্রত্যেকেরই স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার আছে।
এ কোন অন্যায় নয়।তবে আমি কি পাবো?আত্মার শান্তি মিলবে।মৃত্যুর পর ছেলেমেয়েরা একবার হলেও স্মরণ করবে তাদের বাবা মাকে শ্রদ্ধা ভরে।আমার বই পড়ে মাকে ছুঁয়ে দেখার মতো আনন্দ পাবে।বই বুকে নিয়ে মায়ের জন্য একফোঁটা জল গড়াবে অন্তরের চক্ষুলোকে।সুতরাং বিবেকের ধ্বজাধারীগণ যা বলবেন বা লিখবেন বুঝে শুনে লিখবেন,বলবেন।সবাইকে এক কাতারে এনে আমাদের সমস্ত কষ্ট,ত্যাগ আর অর্জনকে বৃথা করে দেবেন না।অনেক পরিবার এই ভয়াবহ দৃশ্যগুলো দেখে আজ শংকিত।কী হবে, কী হতে যাচ্ছে আগামীর দিনগুলোতে?সন্তানদের মন দিয়ে মানুষ করুন,ফলের আশা করবেন না।নিজের জীবন সৃষ্টিশীল কাজে উৎসর্গ করুন।দেখবেন বাজে চিন্তা মস্তিষ্ক আর স্থান পাবে না।ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলুন,মানবিক শুদ্ধাচারের চর্চা করুন, দেখবেন এই ছোট্ট জীবন কত সুন্দর, ফুলে ফলে ভরিয়ে দিবে সংসার কানন,মায়ার বাঁধন।