
নারী কখনো আদুরের মেয়ে, কখনো মহীয়সী স্ত্রী, কখনো মমতাময়ী মা। বাবার ভবিষ্যৎ স্বপ্নপূরণকারী মেয়ে, সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা করে গড়ে তোলা মা। স্বামীর সংসারের দায়িত্ব পালনকারী স্ত্রী। বর্তমান সমাজের নারী পুরুষ সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে নারী শুধু পুরুষের নম্র সহচরী নয়। পুরুষের সাথে বুদ্ধির খেলায়ও মেতেছে। বীরঙ্গনা বেশে যুদ্ধ করেছে শত্রুর সঙ্গে, সাহসিকতার অভিযানের পাল্লা দিয়ে পুরুষের সঙ্গে, রাজনীতিতে পুরুষের সহযাত্রিনী। দেশের কাজে আত্মদানের গৌরবে গরবিনী। ধর্ম ও সমাজ সংস্কারে, সাহিত্য বিজ্ঞ বিশ্বজুড়ে নারীর ভূমিকা অনন্য।
বেগম রোকিয়া থেকে শুরু করে বেগম সুফিয়া কামাল পর্যন্ত বাংলার নারী অধিকারের সংগ্রামে লিপ্ত ছিল যা নারী মুক্তি আন্দোলন।দুঃখজনকভাবে আমাদের দেশের নারীরা আজও পুরুষ সমাজের কাছে অবহেলিত। এ দেশের আর্থসামাজিক পরিবেশে গোঁড়ামি , ধর্মীয় ফতোয়া প্রবল। ফলে নারী অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। নারী অধিকার ও নারী মুক্তি আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু নারীদের প্রত্যাশিত অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। নারীরা এই সমাজে নির্যাতিত হচ্ছে বহুরূপে এসিড নিক্ষেপ, যৌতুকের শিকার, ধর্ষণ। গৃহ চারিকার উপর চালানো হচ্ছে অমানুষিক নির্যাতন।
পুরুষশাসিত সমাজে নারীকে ছোট করে দেখা হয়। নারীর অধিকার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। নারীর ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা করা নারী দিবসের মূল লক্ষ্য। নারী দিবসের পালনের সূত্রপাত ঘটে ১৮৫৭ সালে, যুক্তরাষ্ট্রে। নারী শ্রমিকদের কর্মঘন্টা কমিয়ে আনা, ন্যায্য মজুরি নির্ধারণসহ কর্ম পরিবেশ উন্নয়ন- এরূপ দাবী ছিল নারী শ্রমিকআন্দোলনের। পরবর্তীতে এগুলোর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘ ৮ই মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষনা করেন। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিনটিকে পালন করা হয়।
নারীরা সমাজে অবহেলিত, এই অবহেলা বৈষম্য দূর করতে প্রয়োজন নারী-ক্ষমতায়ন। নারীর ক্ষমতায়ন পুরুষের হাত ধরে নয়, প্রকৃত ক্ষমতা নিজেই করতে হবে। সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। শিক্ষা হবে বিজ্ঞানমনস্ক, মনকে জাগিয়ে তোলা সৃজনশীল শিক্ষা। নারীর কর্মসংস্থান ও সামাজিক অবস্থান ঠিক করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। নারীরা নিজেদের অধিকারে সোচ্চার হবে। পরাধীনতার শেকল ভেঙে বেরিয়ে আসবে নারী। নারী তার মর্যাদা আদায়ে সোচ্চার হবে। কাজী নজরুল ইসলাম বলে গেছেন ‘এ পৃথিবীতে যা কিছু মহান চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’
একটি দেশের সাথে সমাজের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা অপরিসীম। নারীর পূর্ণাঙ্গ মর্যাদায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ পেশা শ্রেণি নির্বিশেষে সকলের গণতান্ত্রিক সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে নারী পাবে ন্যায্য পারিশ্রমিক ও যথাযথ মর্যাদা। নারী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যায় রুখে দাঁড়াবে নারী পাশে থাকবে সমাজ ও রাষ্ট্র- নারী দিবসে এটাই কাম্য। নারী সে যে আগুন দিয়ে তৈরি অগ্নিকন্যা।জান্নাতুল মাওয়া শশী,শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়