
আজকের দিনে এসেও মেয়েদের প্রতি পদে কথা শুনতে হয় রূপের জন্য। একটা মেয়ে কালো হোক ফর্সা হোক লম্বা হোক বা খাটো হোক সেটা তার পরিচয় নয়। আবার প্রতিটা ক্ষেত্রে তাদের কাজটাকে গুরুত্বহীন করে দেখা হয় তাদের রুপের জন্য। জন্মের পর পরিবার খুশি হয় না কালো মেয়ে জন্ম হলে।বিয়ে নাকি দিতে কষ্ট হবে। বিয়ের জন্য পাত্রপক্ষ মেয়ে দেখতে এসে বলে মেয়ে কেমন খাটো কালো মোটা, ঘর টা সাজায়া দিতে হবে পুরা নাহলে এই মেয়েকে নেয়া হবে না। বাবা মা যেন অসহায় তারা মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছেন বলে। এই জন্য অনেক পরিবার মেয়ে সন্তান হলেও খুশি হন না।বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও অনেক কষ্ট পেয়েছেন তার মেয়েদের নিয়ে। কবির ছিলো তিন মেয়ে বেলা, রাণী ও অতশী।
রাণীর জামাইকে পাঠিয়েছিলেন কবি বিলেতে ডাক্তারী পড়তে, না পড়েই ফেরত আসলো। বড় মেয়ের জামাইকে পাঠিয়েছিলেন বিলেতে, ব্যারিস্টারী পড়তে, না পড়েই ফেরেত আসলো। ছোট মেয়ে অতশীর জামাইকেও আমেরিকায় কৃষিবিদ্যার উপর পড়াশোনা করতে। লোভী এই লোক কবিকে বার বার টাকা চেয়ে চিঠি দিতো। কবি লেখলেন জমিদারি থেকে যে টাকা পাই, সবটাই তোমাকে পাঠাই। দেশে ফেরার কিছুদিন পর ছোট মেয়েটাও মারা গেলো। সবচাইতে কষ্টের মৃত্যু হয় বড় মেয়ের। বড় জামাই বিলেত থেকে ফেরার পর ছোট জামাইর সাথে ঝগড়া লেগে কবির বাড়ী ছেড়ে চলে যায়। মেয়ে বেলা হয়ে পড়েন অসুস্থ। অসুস্থ এই মেয়েকে দেখতে কবিগুরু প্রতিদিন গাড়ী করে মেয়ের বাড়ী যেতেন। কবিকে যত রকম অপমান করার এই জামাই করতেন।
কবির সামনে টেবিলে পা তুলে সিগারেট খেতেন। তবু কবি প্রতিদিনই যেতেন মেয়েকে দেখতে। একদিন কবি যাচ্ছেন, মাঝপথেই শুনলেন বেলা মারা গেছে। কবি শেষ দেখা দেখতে আর গেলেন না। মাঝপথ থেকেই ফেরত চলে আসলেন। হৈমন্তীর গল্প যেন কবির মেয়েরই গল্প! তো নারীর উপর এমন অত্যাচার সবকালেই হয়ে আসছে।বিয়ে দিয়ে যেন দায় মুক্ত হতে চান কন্যাদায়গ্রস্থ অসহায় পিতা। নারীরা যেন দানের জিনিস।তাই তাদের রুপ হতে হবে সুন্দর, কেন নারীর গুণটাই কি তার আসল পরিচয় নয়?কেন বিয়ের সময় নারীকে যৌতুকের নামে ঘর সাজিয়ে দিতে হবে,কেন একটা মেয়েকে ক্রীম মেখে ফর্সা হতে হবে। আসুন সবাই ধারণার পরিবর্তন করি। নারীকে রুপের দোহাই দিয়ে আর দাবিয়ে রাখা যাবে না। গুণই হবে তার আসল পরিচয়। নারী হলো মা, নারী হলো বোন, নারী হলো স্ত্রী, নারী হোক প্রেমিকা, নারী হোক সহযোদ্ধা, নারী হোক সর্বক্ষেত্রে অনন্যা। এটাই হোক নারী দিবসে কাম্য রুপ নয় গুণেই হোক নারীর আসল পরিচয়। মৌমিতা চক্রবর্তী,শিক্ষার্থী, পরিসংখ্যান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়