
সম্প্রতি ইসলামের নামে কিছু চিহ্নিত উগ্রবাদীগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যপ্রনোদিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সৃষ্ট অরাজকতার প্রতিবাদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলন রবিবার (৪ই এপ্রিল) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত বাংলাদেশের মুখপাত্র এডভোকেট মোসাহেব উদ্দীন বখতিয়ার বলেন, এদেশের মুসলিম নামধারী কিছু চিহ্নিত উগ্রবাদী গোষ্ঠীর জনবিধ্বংসী কার্যক্রম আজ শুধু ইসলামকেই কলঙ্কিত করছে না, অধিকন্তু বিশ্বব্যাপী মুসলমানদেরকেও সন্ত্রাসী-জঙ্গি হিসেবে রূপায়িত করার চক্রান্তকে ধীরে-ধীরে বাস্তবায়নের পথ সুগম করে দিচ্ছে। এদের এমন জঘন্য অপতৎপরতার সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই, তা তুলে না ধরার পরিণামে এক সময় সরলপ্রান তরুণ যুবকরা ইসলামের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবে এ ধরনের জঘন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দিকে আকৃষ্ট হয়ে যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, উৎপেতে থাকা ইসলামবিদ্বেষীরা ইসলাম আর সন্ত্রাসকে সমার্থক বলে অপপ্রচারের সুযোগ আরো বেশি কাজে লাগাতে কোমর বেঁধে নামবে। তাই, ইসলামের প্রকৃত দর্শন সুফিবাদ ও সুন্নিয়তের বক্তব্য এবং অবস্থান পরিষ্কার করা সময়ের দাবি হিসেবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত নিজেদের বক্তব্য জাতির কাছে তুলে ধরার জন্য এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এসময় বক্তারা আরো বলেন, হেফাজতে ইসলাম নাম ধারণ করে একটি চিহ্নিত উগ্রগোষ্ঠী বারবার বিভিন্ন ইস্যু এবং অযুহাতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিবর্তে জনগনকে চরম দুর্ভোগে ফেলে দিচ্ছে। তারা সম্প্রতি জনগনের চলাচলের মহাসড়কে ইট সিমেন্ট দিয়ে দেওয়াল তুলে দেওয়ার মতো নজীরবিহীন একটি নতুন অপকর্মসূচির জন্ম দিয়েছে। হাটহাজারী ভূমি অফিসে হামলা চালিয়ে হাজার-হাজার মানুষের সম্পদের যে দলিল-পত্রগুলো ধ্বংস করেছে, তা কোনভাবেই বিবেক সম্পন্ন এবং ধার্মিক মানুষের কাজ হতে পারে না। ইতোপূর্বেও এরা থানায় আক্রমন করেছে, কিন্তু কোন বিচার হয়নি, ফলে গত ২৬ মার্চ আবারো একই দুঃসাহস তারা দেখিয়েছে হাটহাজারী থানায় হামলা চালিয়ে। বি-বাড়িয়াসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় তাদের তান্ডবের ফলে হাজার-হাজার মানুষের চরম দুর্ভোগ হয়েছে এবং সময় কাটাতে হচ্ছে চরম আতংকে। অথচ, সাধারন নিরীহ মানুষের কী দোষ? কেন জাতীয় সম্পদ ট্রেন, বাস, সরকারি স্থাপনা পোড়ানোর মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে ইসলামি আন্দোলন হিসেবে মেনে নিতে হবে? সরকারের অভ্যন্তরেও কওমী উগ্রবাদী আছে উল্লেখ করে বলেন, সরকারের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা কওমী উগ্রবাদী সন্ত্রাসী জনগোষ্ঠীটি বরাবরের মতোই তাদের উগ্রবাদী কার্যক্রম অব্যাহত রাখলেও খোদ সরকারপক্ষ তাদের নিয়মিত পৃষ্ঠপোষণ করে যাচ্ছে। আর ঠিক এই কারণেই তারা নিয়মিতভাবে প্রায় প্রত্যেকটা ইস্যুতেই এ ধরণের অসৎ কর্মকাণ্ড জারী রাখার সাহস পাচ্ছে। চিহ্নিত আসামীদের বারবার আইনের আওতায় না এনে ছাড় দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ হতে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্তিত ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত বাংলাদেশের মহাসচিব পীরে তরিক্বত আল্লামা মসিহুদ্দৌলাহ, আহলে সুন্নাত স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য মাওলানা এম এ মতিন, অধ্যক্ষ স উ ম আব্দুস সামাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আল্লামা শাহ খলিলুর রহমান নেজামী, আল্লামা শাহ নুর মোহাম্মদ আলক্বাদেরী, অধ্যাপক জালাল উদ্দীন আজহারী, মাওলানা আব্দুন নবী আলক্বাদেরী, মাওলানা ওবায়দুল মোস্তফা কদমরসুলী, নাসির উদ্দীন মাহমুদ, মাওলানা আশরাফ হোসাইন, মুহাম্মদ অলিউল্লাহ জেহাদী, আলমগীর হোসাইন বঈদী, মাওলানা সোহাইল উদ্দীন আনসারী, আদনান তাহসিন আলমদার, মুহাম্মদ হানিফ মান্নান প্রমূখ। উল্লেখ্য যে, গত ২৬ মার্চ দেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশে আসা নিয়ে ঢাকা বায়তুল মোকারম জামে মসজিদ ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আন্দোলন করে হেফাজতে ইসলাম। পরে একদিনের একদিনের হরতাল পালন তারা।
leave your comments