
মুহাম্মদ এরশাদ-উল- হক, ফটিকছড়িঃ
চট্রগ্রামের ‘ফটিকছড়ি’ উপজেলায় যতোই দিন গড়াচ্ছে, ততোই যেন নিচে চলে যাচ্ছে পানির স্তর। অব্যবহার্য হওয়ার উপক্রম হয়েছে উপজেলার হাজারেরও বেশি টিউবওয়েল (নলকূপ)। বৃহস্পতিবার উপেজলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া যায়।
এসব টিউবওয়েলে পর্যাপ্ত পানি না ওঠায় চরম দূর্ভোগের শিকার হয়েছেন উপজেলার কমপক্ষে ৬ হাজারেরও বেশি পরিবার। টানা খরতাপ, ভ্যাপসা গরম ও তীব্র তাপদাহে পানি সংকটে নেমে এসেছে ফটিকছড়ি উপজেলাজুড়ে
স্থানীয় সূত্রে মতে, উপজেলার ফটিকছড়ি পৌরসভা এবং রাঙামাটিয়া,উত্তর ধুরং,নাজিরহাট পৌরসভার ২ ও ৯ নং ওয়ার্ড ও ফকিরহাট,পাইন্দং ইউনিয়নের পশ্চিশ হাইদচকিয়া, সুন্দরপুর ইউনিয়নের আজিমপুর,বড় ছিলোনীয়া, ভুজপুর ইউনিয়নের ২ নং ও ৯ নং ওয়ার্ড,দাঁতমারার ৩ নং ওয়ার্ড,কাঞ্চননগর ইউপির ৫ নং ওয়ার্ডেসহ উপজেলা বেশ কিছু এলাকায় তীব্র বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া ফটিকছড়ি পৌর বিভিন্ন এলাকাতেও দীর্ঘক্ষণ টিউবওয়েলে মিলছে না পানি। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়েই পুকুর/খালের ময়লা পানি ফুটিয়ে পান করছেন এবং ব্যবহার করছেন দৈনন্দিন কাজেও। অনেকেই আবার কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে কাঁধে কিংবা মাথায় করে নিয়ে আসছেন বিশুদ্ধ পানি। দুই মাস ধরে পানি সংকটে কষ্ট করে আসছেন এ উপজেলার অনেক পরিবার।
পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড এর আহম্মেদ রশিদ চৌং জানান, আমাদের গ্রামের প্রতিটি টিউবওয়েলই অকেজো। টিউবওয়েলের হাতল ধরে অনেকক্ষণ চাপাচাপি করলেও পানি আসছে না। পানির জন্য আমরা খুব কষ্ট করছি। অথচ এলাকায় প্রাচীনকাল থেকে একশো ফিটের নলকূপ থেকে পানি ওঠতো। সম্প্রতি সময়ে পানির সংকট দেখা যাওয়ার আমরা এগারশো ফিটের গভীর টিউবওয়েল বসাই। এতে করে এলাকার মানুষ পানি নিয়ে কিছুটা স্বস্তির।
উপজেলার উত্তর ধুরং এলাকার প্রকৌশলী তৌহিদুল আলম জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এলাকার টিউবওয়েল গুলো থেকে পানি উঠছে না। যার ফলে মানুষকে রোজার মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’
ভুজপুরের বাসিন্দা শিক্ষক মোস্তফা মানিক জানান, ‘আমাদের গ্রামের কমপক্ষে ৩০টি টিউবওয়েলে থেকে কয়েক মাস ধরে পানি উঠছে না। রমজান মাসে মুসল্লিরাও অজু করতে কষ্ট হচ্ছে।’
পাইন্দং ইউনিয়নের ঈসা রিফাত জানান, ‘আমাদের এলাকার প্রায় ৫০ টার উপরে টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। তবে কেউ কেউ বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে পাইপ বসিয়ে কোনো রকম খাবার পানি সংগ্রহ করছেন। এই করোনার সময় এভাবে পানি সংগ্রহ করা অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ।
পৌর এলাকায় পানির সংকট কেনো এমন প্রশ্নের জবাবে, ফটিকছড়ি পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব ইসমাইল হোসেন বলেন, অসংখ্য সাব-মার্সিবল পাম্প স্থাপন ও গভীর নলকূপগুলোর জন্যই মূলত পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় অগভীর টিউবওয়েলগুলোতে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। আশা করা হচ্চে খুব শিঘ্রই এই সংকট কেটে যাবে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রণবেশ মহাজন জানান যে, নরমালি ১০০ থেকে ১২০ ফুট গভীর নলকূপগুলো থেকে পানি উঠছে না। সরকারিভাবে স্থাপন করা গভীর তারা পাম্পগুলোতে পানি উঠছে।গ্রীষ্মের এই সময়টাতে সচরাচর পানির স্তর নিচে নেমে যায় বেশি।এমন কি পুকুরের পানিও কমে গেছে দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ার কারণে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সায়েদুল আরেফিন জানান যে, দীর্ঘদিন বৃষ্টি হচ্ছে না তাই পানির লের কমে গিয়েছে। বৃষ্টি হলে সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।