
আজ গল্পটা বলছি আমার ভর্তিযুদ্ধে আংশিক ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিয়ে। কুষ্টিয়ার যাবো কিন্তু ভ্রমণ করবো না তাই কখনো হয়। তাই হাজার ও টেনশন, দুশ্চিন্তার মাঝেও ঘুরে এলাম কুষ্টিয়ার শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি ও লালন শাহ মাজারে। মুল জায়গায় যাওয়ার আগে একটু অতীতের ঘটনায় যাওয়া যাক। সময়টা ছিল ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের শেষে অথবা নভেম্বরের প্রথমে হবে হয়তো (ঠিক মনে নেই )। যদি-ও লাস্ট পার্টে ইবির এডমিশন নিয়ে লিখেছিলাম তবুও একটু তুলে ধরা যাক। রাবির পরীক্ষা দিয়েই আপুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ডিরেক্ট চট্টগ্রামের পথে রওনা দেই রাত ঠিক ১০ টার বাসে। সাথে ছিল আমার বান্ধবী সাথী। তখন জার্নি করতে এতটাই ভালো লাগছিল যে কি বলব..! তবে পরীক্ষা নিয়ে তেমন কোনো টেনশন ছিল না আমার। যা টেনশন ছিল তা পরিবারই করতো। জার্নি আমার খুবই পছন্দ বিশেষ করে রাতের জার্নি আমার অনেক ভালো লাগতো।

রাতের রাস্তাগুলো এবং আশেপাশের জায়গাগুলো বেশ চমৎকার লাগে আর বৃষ্টি হলে তো কোনো কথায় নেই। যাই হোক পরের দিন সকাল ৮-৯ টার মধ্যে বিভিন্ন উপায়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাই। ভাটিয়ারীর আঁকাবাকা রাস্তাগুলোর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে আঁখি আপুর কাছে আমি ও মিতু (ফ্রেন্ড) থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলাম কয়েকদিন। তখন আবার সমাবেশ চলছিল তাই গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল বিধায় নির্দিষ্ট দিনে ফেরা হয়নি। তারপর গাড়ি চলাচল শুরু হলে বাড়ির পথে রওনা দেই আমি, মিতু, আকাশ আর ইমন। অনেক স্মৃতি রয়েছে এই জার্নিতে। ঠিক ২০ ঘন্টা জার্নি করার পর বাসায় গিয়ে আবার তার পরের দিনই রংপুর চলে আসি। কারণ ইবির পরীক্ষা আছে আর গাড়িও সকাল বেলা ছাড়বে। তাই রংপুর পৌঁছায়ে সবকিছু গুছায় নিয়ে পরের দিন ঠিক ভোরবেলা নিশি আর আমি কোচিং এর পথে পা বাড়াই। সেদিন সকালে এতো কুয়াশা ছিলে যে সামনে কেউ থাকলেও তা দেখার উপায় ছিল না। শীতকাল হওয়ায় প্রচুর ঠান্ডা লেগেছিল আমার। অসুস্থ অবস্থায় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেঘুরে পরীক্ষা দিয়েছি।

এরপর কোচিং এ এসে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সিনিয়রদের সাথে আমি আর রুমা রংপুরে টার্মিনালে চলে আসি। সেখান থেকে সকাল ৯ টার বাসে করে রওনা দেই স্বপ্নের পথে। ইবিতে গিয়ে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল পুরো ৬ ঘন্টা। সেখানে আগে থেকেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন কোচিং এর টিচার এবং আগে পৌঁছানো শিক্ষার্থীরা। তারপর সেখানে রেস্ট নিয়ে, কিছু খেয়ে শারমিন আপু, শরীফা আপুর সাথে পরিচয় হয়ে সবাই ভাগ হয়ে আপুদের সাথে হলে চলে যাই। আমরা যেখানেই যাইনা কেন ৪ ইডিয়ট একসাথেই ছিলাম আবারও সেই ৪ জনই শরীফা আপুর কাছে মানে শেখ হাসিনা হলে অবতরণ করি।
তারপর ধাপে ধাপে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো। ইবিতে তখন মানবিকের এডমিশন পরীক্ষা শেষ। ডিসিশন নেওয়া হলো যে এতদূর যখন এসেছি তাহলে একটু ঘোরাঘুরি করে রংপুর ফিরে যাওয়া যাক। অতঃপর যেই কথা সেই কাজ। সবাই মিলে প্রথমে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর সে সময় এডমিশন হওয়ায় রাস্তায় বাস আর বাসে সিট পাওয়া খুবই কষ্টকর ছিল। তবুও কষ্ট করে প্রথমে বাসে করে একস্থানে (নাম মনে নেই- তবে একটা বিমান আছে) নামায় দেয়। তারপর সেখান থেকে নেমে হোটেলে ফ্রেস হয়ে, খাওয়া- দাওয়া করে নিয়ে অটোয় করে উদ্দেশে রওনা দেই। রাস্তার এতো বাজে অবস্থা কি বলব। প্রথম রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিল চালক তারপর রাস্তার এমন নাজেহাল অবস্থা দেখেও ঐদিক দিয়েই অবশেষে গন্তব্য স্থানে পৌঁছাই মানে রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে। সেখানে গিয়ে টিকেট কেটে ভিতরে প্রবেশ করি সকলে। সেখান থেকে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিগুলোকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিলাম সবাই আর বেশ ফটো ও তোলা হয়েছিল। যদিও বা তা কালের বিবর্তনে হারিয়ে গিয়েছে। সাথে ছিল ( টিচার, সিনিয়ররা আর আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড নিশি, সাথী, হাবিবা)। পরন্ত বিকেলের রোদ থাকায় কুঠিবাড়ির পুকুরটি খুব সুন্দর লেগেছিল।
কুঠিবাড়ির বাউন্ডারির ভিতরের সব জায়গায় নিখুঁত ভাবে দেখা শেষ করে স্থান ত্যাগ করা হয়। তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। তবে সেখানের বাড়ি, পুকুর আর কাঠবিড়ালিও ভালো লেগেছে। এরপর সেখান থেকে ডিটেক্ট লালন শাহ মাজারে যাই এবং তা পরিদর্শন করে দেখি সবাই মিলে। তখন পুরোপুরি সন্ধ্যা নেমে এসেছিল। তারপরও ঘুরে ফিরে মাজার দেখলাম সবাই। ভালোই লেগেছে তবে মাজারের সামনের দোকানগুলো হেব্বি লেগেছিল। দুপাশের দোকানের মাঝ রাস্তা দিয়ে সামনে গেলে বিশাল ফাঁকা স্থান চোখে পরে। সেখানে অনেক স্মৃতি আছে তবে মনে করতে পারছিনা। ভ্রমণ করলে মানুষ অনেক অজানা সম্পের্ক সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে পারে। পুরা দিন ঘুরাঘুরি করে তারপর সেখান থেকে বিদায় নিয়ে রাত্রে রংপুর রোডে আসা হয় এবং বেশ খানিক রেস্ট নেওয়ার পরে কোচিং থেকে ভাড়া করা সেই বাসে উঠে পড়ি। আবারও শুরু হয় সেই রাতের জার্নি। বাস চলতে থাকে তার আপন গতিতে রংপুরের পথে। তবে ইবিতে পড়ার স্বপ্ন আজও স্বপ্নই রয়ে গেছে।
এডমিশন চলাকালীন সময়ে সবথেকে ভালো লেগেছে জার্নিটা আর অনেকের সাথে পরিচয়টা। আমার মনে হয় এটাই একটা সুযোগ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্রমণ করার। কারণ পরে সময় এবং সুযোগের অভাবে তা হয়ে ওঠে না। যদিও তখন অনেকের সাথে ভালো পরিচয় হয়ে উঠেছিল কিন্তু তাদের এখন খুঁজে পাইনা কারণ তখন এই বুদ্ধিটা ছিল না যে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হলে তো আইডি বা ফোন নাম্বার লাগবে। বলতে গেলে জীবনের ভালো সময়গুলোর মধ্যে এডমিশের সময়গুলো এড করা যায়। তবে চলে যায় সময়, রেখে যায় স্মৃতি, মনে দিয়ে যায় ব্যথা। ভালো থাকুন তারা যারা সেই সময়ের সঙ্গী ছিল এই কামনা সবসময়।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।