
তাহিরপুর প্রতিনিধি- বর্ষা এলেই ভাঙ্গনের আতঙ্কে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের হাওর পাড়ের মানুষ। এ উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ও শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের হাওর কেন্দ্রিক প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম বর্ষা আসলেই হাওরের আছড়েপড়া উত্তাল ঢেউয়ের কবলে ভাঙ্গনের মুখে পড়ে।বসতভিটা রক্ষায় প্রতি বছরেই চলে নানামুখী সংগ্রাম।এতে ভিটেমাটি হারানোর ঘটনাও ঘটছে প্রতিবছর। এমনও কিছু গ্রাম রয়েছে,যে গ্রামগুলোর নাম নথিতে ঠিকই আছে,কিন্তু বাস্তবে সেসব গ্রামের অস্তিত্ব নেই।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ও শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন হচ্ছে এ উপজেলার সবচেয়ে নিম্নাঞ্চল ও হাওর কেন্দ্রিক এলাকা।বছরের মে মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত-সাতমাস বর্ষাকাল থাকে। তখন এখানকার গ্রামগুলো ছোট-ছোট একেকটা ভাসমান দ্বীপের মতো দেখা যায়। এ সময় হাওরে সামান্য বাতাস হলেই প্রচণ্ড ঢেউ ওঠে।তিন-চার ফুট উঁচু এক একটি বিশাল ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে হাওরের গ্রামগুলোয়।তখন চোখের সামনেই বিলীন হয়ে যায় কষ্টেগড়া বসতভিটা।
হাওরবাসীর কথা মতো জানাযায় বর্ষায় ঝড়ো বাতাস ও বিশাল ঢেউয়ের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগের নাম তোপান। গোটা হাওরাঞ্চলেই তুফান এক আতঙ্কের নাম।তুফান ও হাওরের আফাল ঢেউয়ের আঘাতের ভাঙনের ঘটনা এ অঞ্চলের নতুন কিছু নয়।যুগ যুগ ধরেই এখানকার মানুষ ভাঙনের হুমকি মোকাবেলা করে আসছে।এই ভাঙন মোকাবেলায় তাদের বড় সহায় ছিল প্রকৃতি বন ও ঘাস। কিন্তু মানুষের সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে নিজেরাই দিনদিন প্রকৃতির এই সহায়কে উজাড় করে দিয়েছে।ফলে তুমুল বর্ষা এখন তাদের কাছে হাজির হয় সর্বস্ব হারানোর ভয়াল আতঙ্ক হয়ে।প্রতি বছরেই বসতবাড়ি ও বাড়িঘর ভাঙাগড়ায় সর্বহারা এ অঞ্চলের অনেকেই।
বসতঘর ভাঙনের ভুক্তভোগী উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের পাশ্ববর্তী তরং নতুন হাটি গ্রামের ইমরান আখঞ্জী বলেন,গেল বছর বন্যায় বসতভিটা ও ঘর হারিয়ে নিরুপায় হয়ে জন্মভূমি ছেড়ে জীবিকার তাগিতে সিলেটে এসেছি,এখানে খেয়েদেয়ে কিছু আয় করে ভাঙা বসতভিটে কিছু বালু দিয়েছিলাম,কিন্তু এতেও থাকার উপযোগী হয়নি।এ বছর বর্ষার শুরুতেই আতঙ্কে আছি,কখন জানি ভাঙ্গনের কবলে পড়ে আমার গড়া কষ্টের বসতভিটা বিলীন হয়ে যায় ।
একই এলাকার দুলাল মিয়া বলেন গেল বন্যায় বসতভিটা ও বসতঘর ভাঙনের পর,টাকার অভাবে বসতভিটা ও ঘর মেরামত করতে পারিনি। ভাঙাঘরটি রেখে পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে আসছি,করোনা পরিস্থিতে তেমন আয়রোজকার করিতে পারিনি।বাড়িঘর মেরামত করতে না পারলে বাড়িতে কিভাবে যাবো এ নিয়ে চিন্তায় আছি।