
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সহকর্মী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, কক্সবাজার জেলার শ্রেষ্ঠ সমাজসেবক, সাবেক ডাকসু নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রদূত অধ্যক্ষ জনাব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর ১১ তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভার প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর, সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য, সফল কুটনৈতিক, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমলের গর্বিত পিতা, কক্সবাজারের মাটি ও মানুষের রাজনীতিবিদ, কক্সবাজারের একসময়ের রাজনীতির বরপুত্র অধ্যক্ষ আলহাজ্ব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী’র ১১ম মৃত্যু বার্ষিকী শুক্রবার ২৭ আগষ্ট। কক্সবাজারের শ্রেষ্ট এই সমাজসেবক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, এ অঞ্চলের গণমানুষের ভালোবাসার মানসপুত্র, বহু শিক্ষা, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, বর্ণাঢ্য রাজনীতিবিদ অধ্যক্ষ আলহাজ্ব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী’র ২০১০ সালের এইদিনে সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান।
কৃর্তিমান এ রাজনীতিবীদের দশম মৃত্যু বার্ষিকী পালনে রামুতে আলহাজ্ব অধ্যক্ষ ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ, আওয়ামী লীগ, সহযোগী-অঙ্গসংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিনব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহন করেছে। আলহাজ্ব অধ্যক্ষ ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী’র সংক্ষিপ্ত জীবনী : জন্ম : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত সহচর মরহুম আলহাজ অধ্যক্ষ ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী ১৯৩৭ সালের ১৮ অক্টোবর রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মন্ডল পাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মালেকুজ্জামান সিকদার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন বোর্ডের আজীবন প্রেসিডেন্ট ছিলেন। শিক্ষা : ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী ১৯৫৫ সালে রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আইএ, ১৯৫৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে এমএ পাশ করেন।
: সফল রাজনীতিবিদ আলহাজ্ব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী ১৯৬১-১৯৬২ সালে ইকবাল হল ছাত্র সংসদের এজিএস ও ১৯৬২-১৯৬৩ সালে ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২ সালে লাহোরে ছাত্র নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দেন। হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রক্তঝরা দিনগুলোতে সকলকে সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ আক্রোশে ওই সময় পাক-হানাদার, রাজাকার, আলবদর বাহিনী তাঁর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধ ও পুনর্বাসন প্রকল্পে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭০-১৯৭৩ সালে রামু-উখিয়া-টেকনাফ নির্বাচনী এলাকা হতে প্রাদেশিক পরিষদ ও জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় বন মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির উপদেষ্টা হিসাবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৭ সাল হতে ২০০১ সাল পর্যন্ত সফলতা ও দূরদর্শিতার সাথে ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত-এর দায়িত্ব পালন করেন।
সমাজকর্ম : সফল সমাজসেবক আলহাজ্ব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী ছিলেন। নারী ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার, সমাজসেবা আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি। ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠায় রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। ১৯৮৮, ১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালের ভয়াবহ বন্যা-জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণ-পুর্নবাসন কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। রেডক্রস সমিতির সহ-সভাপতি হিসেবে ১৯৭৮ সালে মায়ানমারের শরণার্থীদের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ : রামু উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯৭৬ সাল), কক্সবাজার সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮২ সাল), কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৮৬ সাল), কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তাঁর ভাই মরহুম মনির আহমদ চৌধুরী সহ জমি দান (১৯৬৮ সাল), মৈষকুম ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয় (২০০১ সাল), রামু কেন্দ্রিয় জামে মসজিদের ভবন নির্মাণ (১৯৯১-৯৬ সাল), রাস-আল-খাইমা উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত আরব আমিরাত (১৯৯৭ সাল), রামু সরকারি কলেজে জমিদান, রামু খিজারী উচ্চ বিদ্যালয়কে পুণঃ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান সহ তিনি ১৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বহু মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির নির্মাণে সহযোগিতা করেন। তিনি ১৯৬২-৬৯ সাল পর্যন্ত রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে অবৈতনিক শিক্ষক হিসাবে শিক্ষকতা করেন।
সংগঠক, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী। তিনি ১৯৫৭-১৯৫৯ সালে ঢাকা কলেজ সাময়িকী ‘মসিরেখা’ সম্পাদনা করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৬৮-৬৯ সালে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের সভাপতি, ১৯৬৯-১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম জেলা লবণ উৎপাদক সমিতির সভাপতি, কক্সবাজার মহকুমা রেফারী ও আম্পায়ার এসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি, জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি, লায়ন্স ক্লাব, রামু দুর্বার শিল্পীগোষ্ঠিসহ অনেকগুলো সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, সভাপতি ও উপদেষ্টা ছিলেন।