
পিয়াল দাস অনুপ: এ যেন দুধের স্বাদ গোলে মেটানো। এত এত পরিশ্রম আর এত প্রচেষ্টার সফলতার পরেও ঠিকঠাক গন্তব্য ঠিক কত দূরে তা জানা নেই। বলছি এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী এবং মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কথা। ক্লাস চলছে অনলাইনে, ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান পর্যন্ত হলো অনলাইনে। অথচ এ এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের কথা ছিলো ভর্তি হয়ে স্বপ্নের কলেজে ক্লাসে বসে নতুন বন্ধু বান্ধবীদের নিয়ে ক্লাস করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্বপ্ন দেখবে। নতুন কলেজ ড্রেস পরে ছবি তুলবে বন্ধুদের নিয়ে। কিন্তু তা আর হলো কই। জুম কিংবা গুগল মিটে বাসায় বসে ক্লাস করতে হচ্ছে। আক্ষেপ যেনো আরো তীব্র হয়ে উঠলো। সাধারণত কলেজ জীবন সম্পূর্ণ ২ বছরও হয় না কিন্তু এ কলেজ সময়ের গল্প থাকবে না তা কখনো হতেই পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে যখন বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীদের সাথে মিশবে তখন ওদের সবারই এক অবস্থা। কলেজ জীবনের গল্প গুলোই অধরা।।
অারেকদিকে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শখের মেডিকেল কলেজ পেয়েও কলেজে যেতে না পারার যে বেদনা তা মেনে নিতে পারছে না কেউই। একটা সাদা এপ্রন আর গলার ঝোলানো স্টেথোস্কোপ নিয়ে একটা বন্ধুদের নিয়ে ছবি নেই। পালন করতে পারছে না মেডিকেল কলেজের প্রথম দিনের উৎসব। যে মোবাইলের গ্যালারি ভরে যাওয়ার কথা গ্রুপ ছবি আর শিক্ষকদের সাথে অথচ সে গ্যালারীতে নেই তেমন কোন মুহূর্ত। কত কষ্টের অতীতগুলো আর কত স্বপ্ন দেখা মেডিকেল জীবনের প্রথম দিনটাকে নিয়ে সব যেন আজ বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কত কথা জমে ছিলো, জমে ছিলো কত ভর্তি পরীক্ষার আগের কত ঘটনা। কথা ছিলো হোয়াইট বোর্ডে তাকিয়ে একসাথে সবাই মিলে ক্লাস করবে তারপরে সারা দিন ল্যাবের এক ঘেয়ে সময় কাটানোর পর বন্ধুরা মিলে গলা ছেড়ে সুরহীন গলায় গান গেয়ে আবার জীবনের চলা শুরু করবে। অথচ চেয়ে আছে ওরা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে। টিচার বলে যায় ওরা মনযোগ দিলে দিলো না দিলে কি?
হয়তোবা ঐ সময় হুট করে আক্ষেপ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাদ না পাওয়া। এইচএসসি ও মেডিকেলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের কষ্ট হয়তে এ জায়গায়ই। সফলতা পাবার যে অনুপ্রেরণা কিংবা জীবনের জন্য কতটুকু ডেডিকেশন থাকা প্রয়োজন সেটা হয়তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২-৪ জন বন্ধুদের সাথে মিশতে পারলে প্রতিযোগিতা টা সুন্দর হতো। ওরা মাঝে মাঝে সিনিয়রদের কাছ থেকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিনের গল্প শুনে বুঝতে পারে করোনার থাবা কতটা ভয়াবহ । করোনা দুটো জীবনের মাঝে কত বড় দেয়াল তুলে দিলো। তখন হয়তো ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে ঈশ্বর পৃথিবীকে স্বাভাবিক করে দাও। জীবনের সঙ্গে জীবনের সংযোগ না ঘটলে ব্যর্থ যে হবে গানের পসরা।
লেখক : পিয়াল দাস অনুপ, শিক্ষার্থী, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা