
বিশ্ব ব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য গত বছরের মার্চ মাস থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় ক্যাম্পাস এব বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসমূহ। বন্ধের দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কোনো নোটিশ আসেনি। তাই ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য এখন সকাল নয়টা বেজে গেলেও কোনো তাড়া থাকে না। বন্ধু ক্লাসে আসতে পারব না আজ! শব্দটি শুনা হয়না অনেক দিন ধরে। বন্ধুদের ফোন করে বলা হয় না আগামীকাল ম্যামের ক্লাস হবে না । বন্ধুদের বলা হয়না কোথায তুমি ক্লাসে আসতে এতো দেরি হচ্ছে কেন, কোন সমস্যায় আছো কি? আগের মতো বন্ধু- বান্ধবদের সাথে আড্ডাও হয় না। আর ম্যামরা বলেনা তোমরা কাল সিভিলাইজেশ্যন টপিকটা পড়ে আসবা, গ্রুপ ভাগ করে দেয়না ভাইভা, অ্যাসাইনমেন্টর জন্য।
আজ ভাইয়া ও আপুরা ক্লাসে গিয়ে বলে না যে সবাই সবার সাথে পরিচিত হয়েছো কি? কেউ বলেনা অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের ফোন দিয়ে তাদের অবহিত করতে। কেউ ফোন দিয়ে বলে না যে কোথায় তুমি, কি করো, কেমন আছো? কথা গুলো মনে হলে ভিতরটা কেমন খাঁ খাঁ করে উঠে! শিক্ষার্থীরা বাসায় জেলখানায় বন্দী কয়েদীদের মতো জীবনযাপন করছে। হতাশা – দুশ্চিন্তা তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা কত স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাদচারণ করেছিল কিন্তু এক অদৃশ্য করোনা নামক ভাইরাসের কারণে তা আজ স্থীর। নিস্তব্ধ পুরো বিশ্ব। আতঙ্কে রয়েছে মানুষ, জীবন যেন থমকে গিয়েছে ।
সবাই মিস করছে তাদের প্রিয় ক্যাম্পাসকে তেমন আমিও খুব মিস করেছি স্বপ্নের ক্যাম্পাসকে। তাইতো সব বাধা বিপত্তিকে সাইডে রেখে চলে এসেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এতো দিন বাসায় থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ভালোই লেগেছিল। কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করার পর হঠাৎ এই যেন খারাপ লাগা শুরু করেছিল। পুরো ক্যাম্পাস যেন অচেনা লাগছিল। অনেক কিছু পরিবর্তন এসেছে ক্যাম্পাসে যা দেখে ভালোই লেগেছিল। তবে আগের মতো নেই কোনো কোলাহল- হৈচৈ, চারিদিকে সবুজ গাছপালা, ফুলের সমারোহ, ক্লাস রুমের দরজায় ইয়া বড় তালা ঝুলছে। জনশূন্য ক্যাম্পাসে বার বার মনে পড়ছিল অতীতের স্মৃতিগুলো। ক্লাসে বসে ক্লাস করা, আন্দোলন, আড্ডা দেওয়া সব যেন চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল। কিন্তু কিছু করার নেই বর্তমান পরিস্থিতিতে চাইলেও এসব হয়ে ওঠা সম্ভব হবেনা।এখন শুধু অপেক্ষা আবার কবে ক্যাম্পাস তার আগের রূপে ফিরে আসবে। কতদিন বন্ধুদের সাথে দেখা হয়না, আড্ডা দেওয়া হয়না একসাথে ঘুরতে যাওয়া হয়না। শিক্ষার্থী বিহীন ক্যাম্পাসে নেই আগের মতো মানুষের আনাগোনা, নিস্তব্ধ চারিদিকে। কবে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হবে প্রিয় ক্যাম্পাস, কবে প্রাণ ফিরে পাবে। সবার মুখে একটাই প্রশ্ন কবে ফিরব ক্যাম্পাসে? বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সবই পেয়েছি শুধু বন্ধুদের ছাড়া। ইচ্ছে করলেই যে কোন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারি কিন্তু পাইনা আগের মতো পরিবেশ এবং কাছের মানুষদের।
প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থী তার নিজ নিজ ক্যাম্পাসের মায়াজালে আবদ্ধ থাকে এবং থেকে যায় স্মৃতিকথাও। একসাথে বন্ধুদের সাথে ক্লাসরুমে ক্লাস করা, আড্ডা দেওয়া, ঘুরতে যাওয়া, খেলাধূলা ও দুষ্টামি করা এগুলো যেন নিত্যদিনের ঘটনা। সবমিলিয়ে এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে প্রতিটি শিক্ষার্থীর। করোনায় জীবনকে সংকীর্ণতা করেছে। প্রতিক্ষণেই হৃদয়ে একটা ভয় জাগ্রত করে, প্রিয়জনদের সাথে আবার দেখা হবে কিনা, ক্যাম্পাস খুললে ক্লাসে আবার সবাইকে পাবো কিনা, সেই রঙিন ও উৎসবমুখর দিন ফিরে পাবো কিনা।
জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন ও চমৎকার মুহুর্তগুলো শিক্ষা জীবন ঘিরেই। তবে খুব কম দিনই থাকার সৌভাগ্য হয়েছে ক্যাম্পাসে। যে কয় দিনই ছিলাম সেই দিনগুলো ভোলার মতো না। কবে খুলবে ক্যাম্পাস এখন শুধু সেই অপেক্ষায়। কবে আবারও একসাথে হব ভালোবাসার মানুষগুলোর সাথে। মনটা আজ বিচলিত। আগের মতো পরিবেশ ফিরে আসুক এই কামনা করছি। শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় মুখরিত হোক ক্যাম্পাস। প্রাণ ফিরে পাক প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।