
সময়টা ছিল ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে। সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি এবং অনেক নতুন নতুন বন্ধু হয়েছে। তাই একদিন আমরা সব ফ্রেন্ডরা অনেক কৌতূহল নিয়ে সবাই মিলে প্লান করে ঘুরতে যাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে। গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটারের পথ টুঙ্গিপাড়া। আর যেহেতু ইতিহাসের স্টুডেন্ট সেহেতু আগ্রহ থেকেই যায়। বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ অবস্থিত গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় । মধুমতী নদীর তীরে সবুজে ঘেরা এক সময়ের অজপাড়াগাঁ।
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ এক সম্ভ্রান্ত শেখ বংশের ঘর আলো করে খোকা নামে যে শিশুটি জন্ম নিয়েছিলেন, তিনি বাঙালীর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সমাধিসৌধ যেখানে ঘুমিয়ে আছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি , জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । সময়ের ব্যবধানে অসম্ভব দুর্গম সেই অজপাড়াগাঁ টুঙ্গিপাড়া আজ কোটি কোটি বাঙালীর প্রাণের তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমিতে প্রতিদিন হাজারো দেশি-বিদেশি মানুষের ভিড় দেখা যায়। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন শ্রদ্ধা জানাতে। সেখানে ঢুকতেই চোখে পড়বে পাথরের গায়ে লেখা রয়েছে- ‘দাঁড়াও পথিকবর যথার্থ বাঙালী যদি তুমি হও। ক্ষণিক দাঁড়িয়ে যাও, এই সমাধিস্থলে। এখানে ঘুমিয়ে আছে, বাঙালীর সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা।’ পৌঁছায়ে আমরা সবাই চারিদিকে ঘুরেফিরে দেখছিলাম এবং ক্যামেরাবন্দি করছিলাম। আমাদের মতো এমন দেখার জন্য প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ছুটে যান সেখানে। কবর জিয়ারতের পাশাপাশি মনোরম দৃশ্যও ভালো লাগে ভ্রমণ পিপাসুদের। ১৯৭৫ সালে দেশদ্রোহী ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হওয়ার পর তাঁকে দাফন করা হয় সেখানে। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর করব ঘিরেই গড়ে ওঠে সমাধিসৌধ।
আমার জানা মতে, সমাধিসৌধে ঢুকতে কোনো প্রবেশমূল্য দিতে হয় নি আমাদের । ভিতরে প্রবেশ করে এক এক করে সব জায়গায় পরিদর্শন করছিলাম আমরা। সমাধিসৌধের প্রদর্শনী গ্যালারি দেখতেই চোখে পড়ে বঙ্গবন্ধুর জীবনের বিভিন্ন সময়ের ছবি। রয়েছে একটি পাঠাগারও। পাঠাগারের পাশেই দর্শক গ্যালারিসহ একটি উন্মুক্ত মঞ্চ রয়েছে। মূলত সেখানে হয়তো বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে। গ্যালারি থেকে কিছু দূরে বঙ্গবন্ধুর কবর। চমৎকার স্থাপত্য দিয়ে কবরটিকে আবৃত করে রাখা হয়েছে। কবরের কাছে সবার যাওয়ার অনুমতি থাকলেও ছবি তোলা নিষেধ। আর সেই সময় মূলত দুই, একদিনের মধ্যে কোন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল তাই সমাধিসৌধ পরিষ্কার করা হচ্ছিল আর আমাদের সমাধিসৌধের ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়নি।
তারপর আর কি! আবারও একস্থান থেকে আরেক স্থান ঘুরেফিরে দেখছিলাম। পুরো কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে পাঠাগার, গবেষণাকেন্দ্র, প্রদর্শনী কেন্দ্র, মসজিদ, পাবলিক প্লাজা, প্রশাসনিক ভবন, ক্যাথেটেরিয়া, উন্মুক্ত মঞ্চ, বকুলতলা চত্বর, সুভেনির কর্নার, প্রশস্ত পথ, মনোরম ফুলের বাগান ও কৃত্রিম পাহাড়। মাজার কমপ্লেক্সের পাঠাগারে দেড় হাজারেরও বেশি বই রয়েছে। এখানে চারদিকে গাছ-গাছালি, ফল ও বিল। শুধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স নয়, এর আশপাশের এলাকাতেও অনেক কিছু দেখার রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদি পৈত্রিক বাড়ি, ছোটবেলার খেলার মাঠ, বঙ্গবন্ধুর স্কুল, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় বালিশা আমগাছ, শেখ বাড়ির জামে মসজিদ (স্থাপিত ১৮৫৪ সাল)। আছে হিজলতলা ঘাট। আরও দেখা যায় শেখ পরিবারের ঐতিহ্যবাহী একটি বড় ও একটি ছোট আকারের পুকুর এবং বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের পাশেই নির্মিত শেখ রাসেল শিশু পার্ক। পুরো টুঙ্গিপাড়াকেই বদলে দিয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স। প্রতিদিনই শ্রদ্ধা জানাতে আসা অগণিত দেশী-বিদেশী মানুষের ভীড় জমে। করোনা মহামারীর পরিস্থিতিতে সাময়িক বন্ধ ছিল। তাই আবারও পরিদর্শনে গেলেও কোনো মতে তারা ভেতরে প্রবেশ করতে দেননি। ভ্রমনপিপাসুরা দেড়ি না করে চলে আসুন বঙ্গবন্ধুর পূণ্যভূমিতে।