
সময়টা ছিল ২০২০ সাল, সবেমাত্র গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) কয়েকটি দিন ক্লাস করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে মোটামুটি অনেক নিয়ম রয়েছে তাতো আমার জানা ছিলনা। এই ধরেন ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র থেকে পরিচিত হওয়া শুরু করে নিজ বিভাগ, জেলা, বন্ধু-বান্ধব এতোসব কিছুর সাথে নাকি পরিচয় হতে হয়। তবে পরিচয় হওয়ার ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই ইন্টারেস্টিং লেগেছে এবং প্রথম দিকে তা আতঙ্কের ও মনে হয়েছিল কেননা কখন কি বলতে বলে, কখন কি করতে বলে এসব প্যারা লাগতো তখন। তবে পরবর্তীতে ভালো লেগেছে কারণ পরিচয় থাকাটা অতীব জরুরী বলে মনে করি আমিও। বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পেতে পারি, সাহায্য, পড়াশোনা এমন কি ইত্যাদি বিষয়ে জানা যায়।
তবে পরিচয়টা যদি হয় একই জেলা এবং উপজেলার সিনিয়র এবং সেম ইয়ারদের সাথে তাহলে তো কোনো কথাই নেই। মূলত ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাইবান্ধা জেলার সব সিনিয়রদের সাথে আমাদের জুনিয়রদের পরিচয়পর্ব এবং নবীনদের বরণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকপাড়ে একটি আয়োজন করা হয়। সেখানে সিনিয়র-জুনিয়র গোল হয়ে বসে একে অপরের সাথে পরিচয় হচ্ছিলাম সবাই। তখন কেউ কাউকে চিনতাম না মূলত চেনার জন্যই এই পরিচয় পর্ব। পরিচয় পর্ব শেষে আমাদের রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। পরিচয় পর্বে একটা জিনিস খুবই বিরক্তিকর লেগেছিল তখন সেটা হচ্ছে কেউ পরিচয় দিতে গিয়ে ভুল করলে তাকে বার বার পরিচয় দিতে বলা হতো। আর বার বার সময়ের কথা উল্লেখ করতো যেমন; ঠিক ৩.০০ টায় যথাসময়ে যথাস্থানে উপস্থিত থাকতে হবে, একটুও লেইট যেন না হয়। এটা অবশ্য আমাদের ভালোর জন্যই করেছিল এখন তা বুঝতে পারি।
প্রায় কয়েক ঘন্টার পরিচয় পর্ব শেষে সিনিয়রদের বক্তব্য, ভালো-মন্দ দিকনির্দেশনা আরও ইত্যাদি বিষয়ে অবগত করেন। আস্তে আস্তে প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল। শেষ পর্যায়ে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেন সিনিয়ররা। তারপর আমাদের গ্রুপ ফটো উঠানো হলো, একে অপরের ফোন নাম্বার বিনিময় হলো। সব মিলে দিনটা ছিল স্মরনীয়। আর একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছি সেটা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র ডাকা মানেই যেন খাওয়া দাওয়া বিশাল আয়োজন। সারাজীবন এমন জুনিয়রই থাকতে চাই। আগে ভাবতাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিত থেকেই বা কি হবে, একই জেলা, উপজেলার থেকেই বা কি হবে? যে যার যার মতো থাকবে। আসলে তা না বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ জেলা মানে আরেকটি পরিবার। কিন্তু আগে যত্তসব ভ্রান্ত ধারণা ছিল আমার। এখন বুঝতে পারি সবাই কত উপকারে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু পড়াশোনার জায়গা না সেখানে নানান রকম শিক্ষা পাওয়া যায় যা একজন মানুষের মন ও মানসিকতাকে সুন্দর হতে সাহায্য করে। জেলা এসোসিয়েশন অনেক উপকারে আর সেখান থেকে আমরা অনেক ভাই-বোন পেয়েছি যারা আমাদের এডমিশন দিতে ও ভর্তি হতে এসে থাকতে এবং সার্বিক দিক থেকে সাহায্য করেছেন কৃতজ্ঞতা তাদের সবার প্রতি। আমাদের জেলা এসোসিয়েশনের সিনিয়ররা অনেক বন্ধুসুলভ যা আমার খুবই ভালো লেগেছে। ভবিষ্যতে যেন আমরা জুনিয়ররাও সিনিয়রদের মতো হতে পারি। এমন স্মরণীয় দিন আবারও ফিরে পেতে চাই। ইনশাআল্লাহ্ আবারও দেখা হবে সিনিয়র এবং সহপাঠীদের সাথে। সেই অপেক্ষার প্রহর হয়তো আর বেশিদিন নেই। ভালো থাকুক সকলে।