
আজ সেই ৩০ অক্টোবর (৩০ অক্টোবর ২০১৯), যেদিন স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কোচিং থেকে রাত প্রায় ১০টা ৩০ মিনিটে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামন থেকে বাসে করে এডমিশন পরীক্ষার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। বেশখানিকটা দূরের পথ জন্য গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগেছিল। পরের দিন (৩১ অক্টোবর ২০২১) ঠিক সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে পৌঁছালো বাস। তারপর সব শিক্ষার্থীরা এক হয়ে যে যার গন্তব্যে পৌঁছে গেল। বাকি থাকলাম মাত্র কয়েকজন। কারণ আমরা যে আপুর কাছে থাকতাম তারা তখন ক্লাসে থাকায় ভাইয়ার (কোচিং এর টিচার- শাহ আলম ভাইয়া) ফোন ধরতে পারেনি। অতঃপর সালমা নূরী আপুর কাছে ‘হলে’ রাখার জন্য মনস্থির করলো ভাইয়া কিন্তু ততক্ষণে আপুরা চলে এসেছেন আমাদের কাছে। মানে যাদের কাছে থাকার কথা ছিল তারা চলে এসেছিলেন (বর্ষা আপু ও লাবণ্য আপু)। তারপর হোটেলে খাওয়া দাওয়া করে রওনা দিলাম আপুদের মেসের উদ্দেশ্য। সেখানে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিলাম কারণ জার্নি করার ফলে খুবই টায়ার্ড ছিলাম। আপুদের কাছে আমি আর আমার ছোটবেলার বান্ধবী মিতু ছিলাম।
অতঃপর ১ তারিখ চলে এলো আর টেনশনে কিচ্ছু ভালো লাগছিল না। লাইফটা তখন মূল্যহীন। চোখে মুখে একটাই স্বপ্ন, একটা সিট, একটা পাবলিক ভার্সিটি। পরীক্ষা ছিল ২ দিন। প্রথম দিন (১লা নভেম্বর) ১টি পরীক্ষা দিয়ে, ক্যাম্পাসে একা একা ঘুরে-ফিরে, খাওয়া- দাওয়া করে সন্ধ্যায় মেসে পৌঁছাই। বাসা থেকে তো সারাক্ষণ ফোন দিয়েই যায়। তখন তাদের কিবা বলার থাকে? তখন ও কিছু বলার ভাষা ছিলনা আমার। পরের দিন মানে ২ তারিখ, সেদিন সকাল বিকাল ২ টি পরীক্ষা হয়েছিল। সুতরাং সকালের পরীক্ষা দেয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে আমাদের কোচিং এর বাস থাকায় সেখানে যাই। বাসে সবাই বই ইত্যাদি ইত্যাদি জিনিসপত্র রাখতো। তাই আমিও রেখেছিলাম প্রশ্ন ব্যাংক কিন্তু সেখান থেকে আমার প্রশ্ন ব্যাংক হারিয়ে যায়। খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। যতোই হোক অনেক ভালোবাসা লেগে ছিল প্রতিটি পৃষ্ঠায় আর স্মৃতিও বটে প্রশ্ন ব্যাংকটি।
তো এসবের পর কিছু ফ্রেন্ড সহকারে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য ক্যাম্পাসের সাইডের হোটেলে যাই কিন্তু সেখানে আরেকটি সমস্যার সৃষ্টি হয়। দোকানের ভাইটি আগে বলেছিলেন এক কথা কিন্তু পরে বলেছিলেন আরেক কথা৷ তাই মজা করে দোকানদার ভাইয়ার সাথে আমার এক ফ্রেন্ড ঝগড়া করে একটু। দোকানদার বলেছিলেন যে এখানে চান্স পেলে (—————)
তারপর আমরা বললাম যে চান্স পেলেও এতদূর আসবোনা আর আসলেও চিনতে পারবেন না আমাদের। কিন্তু শেষে এতোদূরেই আসতে হলো। তবে আমার আশা ছিল যেন, অনেক দূরে কোথাও পড়াশুনা করার সুযোগ পাই। সুতরাং তাই হলো। এখন আপসোস করতে হয়। তারপর বিকেলের পরীক্ষা মোটামুটি দিয়ে সন্ধ্যায় সব স্টুডেন্ট এক হয়ে ক্যাম্পাসে অনেক্ক্ষণ অপেক্ষা করে কুষ্টিয়া তথা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য বাস স্থান ত্যাগ করে। তবে যে ইউনিটে ভালো পরীক্ষা হয়েছে পরে দেখি সেটাতেই ওয়েটিং এ কারণ সকলে ভালো পরীক্ষা দিয়েছিল। আর যেটাতে পাশই করার কথা না পরে সেটাতেই চান্স হলো।
একটা কথা না বললেই নয়, (বর্ষা আপু, লাবণ্য আপু এবং তাদের মেসের আপু এবং আনটি) অনেক ভালো ছিলেন, অনেক টেককেয়ার করেছেন আমাদের। ২জন আপুকে আগে থেকেই চিনতাম কিন্তু এতো কাছ থেকে কখনো মেশার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। এডমিশন সুত্রেই আরো ভালোভাবে চেনা। হয়তো এভাবেই আমিও কখনও কাউকে সাহায্য করবো। আই মিন সাহায্য করতে চাই। দোয়া ও কৃতজ্ঞতা তাদের প্রতি। আর পরীক্ষা কেমন দিয়েছি সেটা বড় কথা না, কথা হলো চান্স হবে কিনা সেটা। কারণ এডমিশন শেষে রেজাল্ট এর সময় কেউ জিজ্ঞেস করবেনা পরীক্ষা কেমন দিয়েছি, সবাই জিজ্ঞেস করবে চান্স হলো কি-না? আর এডমিশন পরীক্ষা এটি ভাগ্য এবং পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করে।
এডমিশন পরীক্ষা এটি একটি যুদ্ধক্ষেত্র আর পরীক্ষার্থীরা হলো সৈনিক। এডমিশন সময়টা মূলত আমার কাছে শিক্ষার আবাস্থলও মনে হয়। কেননা এডমিশন সময়ে জীবনের অনেক কিছু উপলব্ধি করা যায়, কতো শতো স্মৃতি, দুঃখ- কষ্ট, আশেপাশের কিছু মানুষের কথা, একসাথে অনেক জায়গায় ভ্রমণ ও হয়ে যায়, মানুষদের চেনা যায়, পরিবেশ, ভাষা, আচার-আচরণ ইত্যাদি ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। আর এডমিশনের যাত্রাটা তখনি সার্থক/সাকসেসফুল হয়, যখনি কোথাও না কোথাও চান্স হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা আমার এবং পরিবারের স্বপ্ন ছিল কিন্তু সেটা দেড়িতে বাস্তবায়ন হয়। আর এই ভর্তিযুদ্ধে হাজারো পরিস্থিতিতে পরতে হয়েছিলো ও নানান সমস্যা এবং অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। দিনশেষে সৃষ্টিকর্তার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। অবশেষে স্বপ্নটা পূরন হয়েছে। ভর্তি হয়েছি ভালবাসার এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর পরই তো আবারও বাসায় বন্দী জীবনটা বেদনাময়। তবে একটা জিনিস মাথায় রাখা উচিৎ, আজ আমি কষ্টকে যদি সাময়িক সময়ের জন্য কুর্নিশ করি, তাহলে কাল সফলতা আজীবনের জন্য কুর্নিশ করতে বাধ্য। কেননা চান্স পাবার পর সেই না ঘুমানো রাত, মানুষের কটুকথা, হাজারো কষ্টগুলোকে কিছুই মনে হবে না। সবগুলো কষ্টই যেন নিমেষেই মুছে যাবে আর সফলতা হয়ে মিশে থাকবে। সর্বোপরি কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি যারা সে সময় পাশে ছিল আর কৃতজ্ঞ মহান সৃষ্টি কর্তার প্রতি।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।