
প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ;নানা চড়াই-উতরাই পার করে পূর্ণ করেছে বিজয়ের অর্ধশত বছর।১৯৭১ সালে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত আর ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি এই লাল সবুজের পতাকা। ডিসেম্বর মাস চলছে।প্রতি বছরই এই মাসটি এলে আমাদের প্রাণে দোলা দিয়ে যায়।একদিকে বিজয়ের আনন্দ অন্যদিকে শহীদের কথা মনে পড়ে যায়।দেশ মাতৃকারটানে সেদিন বীর মুক্তিযোদ্ধা,কামার,কুমার,কিশোর,তরুণ,যুবক, নারীসহ সর্বস্তরের মানুষ ঝাপিয়ে পড়ে ছিনিয়ে এনেছিল এই রক্তিম সূর্য। আর এই দীর্ঘ অর্ধশত বছরে নানা প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তি নিয়ে কি ভাবছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একঝাঁক মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত, ভাবনা তুলে ধরছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদিম মুনিব।
সবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে– বিজয়ের পঞ্চাশ বছরের আমাদের প্রাপ্তি কম নয়, তবে প্রত্যাশা আরও বেশি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পেয়েছি বিজয়। মৌলিক অধিকার আজ সম্পূর্ণ রুপে বাস্তবায়ন হয়েছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান সকল দিক থেকেই দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে অতুল পরিবর্তন। মানুষ যেখানে আগে তিনবেলা ঠিকমতো খেতে পেত না, আজ দেশে খাবারের অভাব নাই। দেশ ডিজিটাল হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি , সম্পদ উৎপাদন ও আহরণ বৃদ্ধি এগুলো প্রশংসার দাবি রাখে। তবে বিজয়ের পঞ্চাশ বছরে যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যানটা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ তুলনামূলক কম উন্নতি করেছে, সময়ের তুলনায়।
একটি দেশের উন্নয়নের অন্যতম অন্যতম মাধ্যমে শিক্ষা। তাই সব কিছুর উপরে শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এবং বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বেকারত্ব যেন আমাদের পিছু ছাড়ে না। এই অবস্থা আছে আমাদের বেকারত্ব সমস্যা। বেকারত্ব সমস্যার সমাধান করতে হবে। কালোটাকার সংখ্যা বৃদ্ধি, বিদেশে অর্থ পাচার, দূর্নীতি, কালোবাজারি, ঘুষ দেশের উন্নয়নের পথে বাধা। এসব রোধে সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
সমতাভিত্তিক উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন,আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মোঃ আরিফুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
শান্তি শৃঙ্খলার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হোক– বছর শেষে আবার ফিরে এসেছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। স্বাধীনতাকামী বাঙালির হৃদয়ে মাসটি মহা আনন্দের, মহা গৌরবের। স্বজন হারানোর বেদনায় এই মাস একইসঙ্গে শোকের, আবার উদযাপনেরও। বিজয়ের এই মাসটিকে স্মরণ করে রাখার জন্য জাতীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হয় যা একটি দেশ এবং জাতির জন্য গৌরবের বিষয়।ইতিমধ্যে আমরা পার করে ফেলেছি বিজয়ের পঞ্চাশটি বছর। একটি দেশের জন্য ৫০ বছর কম সময় নয়। আমাদের পরে বা আমাদের কাছাকাছি সময়ে স্বাধীন হওয়া অনেক দেশ আমাদের তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। উন্নতি করেছে কাঙ্খিত মাত্রায়। তাই এ পর্যায়ে এসে পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব কষা খুবই প্রাসঙ্গিক বিষয়। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড আজ শিল্প উন্নয়নে বিশ্বের সামনে উদাহরণ। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, জ্ঞান-বিজ্ঞানে উৎকর্ষতা, উন্নয়ন, শান্তি, সামাজিক নিরাপত্তা, সুশাসন, মানবিক মূল্যবোধ এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সূচকে বিজয়ের এতগুলো বছরে আমাদের অর্জনকে আজ মূল্যায়নের সময় এসেছে।
বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হয় নি এমন নয় আমরা দেখতে পাচ্ছি যোগাযোগ অবকাঠামো থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে, আগের তুলনায় মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে কিন্তু এসব কিছুই সফলতার প্রাথমিক খতিয়ান। জীবনযুদ্ধে প্রতিনিয়ত তাদের একমুঠো ভাত যোগাড় করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে যদি আমরা নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন করি তাহলে দেখা যাবে আমাদের অর্জন খুব বেশি প্রত্যাশিত নয়! বুক ভরা আশা নিয়ে এ দেশের সর্বস্তরের মুক্তিকামী মানুষ বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল, তারা স্বপ্ন দেখেছিল এক বৈষম্যহীন স্বাধীন সোনার বাংলার।
শান্তি-শৃঙ্খলা ও ন্যায়পরায়ণতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠুক আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। বিজয়ের মাসে গণমানুষের এটিই প্রত্যাশা। জান্নাতুল ফেরদৌস আঁখি,ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নই হবে বড় অর্জন– জাতি হিসেবে আমরা সৌভাগ্যবান, কেননা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বিজয়ের ৫০ বছর আমরা একই বছর উদযাপন করতে পারছি। ইতিহাসে এরকম ২য় ঘটনার স্বাক্ষী কোন জাতি হতে পেরেছে কিনা জানা নেই। অতএব অর্জনের কথা বললে মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে একটি স্বাধীন দেশ পাওয়াই আমাদের বড় অর্জন হিসেবে গণ্য হওয়া উচিৎ। কিন্তু বলা হয়ে থাকে, স্বাধীনতা অর্জনের চাইতে তা রক্ষা করা কঠিন। এই চ্যালেঞ্জটির মুখোমুখি বিগত পাঁচ দশকে বাঙালি জাতি একাধিকবার হয়েছে। কুচক্রী একটি মহল মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে যুদ্ধত্তর সকল ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্বীকার করে আসছে। আর এর সাথে কতিপয় স্বার্থন্বেষী নামধারী মুক্তিযোদ্ধার আতাতে আমরা প্রথমেই হারিয়েছি বাঙালির বরপুত্র শেখ মুজিবকে। স্বাধীনতার লাল সবুজের পতাকাকে কলঙ্কিত করার ইতিহাস স্বাধীন বাংলাদেশে এর মাধ্যমেই শুরু হয়। এরপর যে গণতান্ত্রিক সাম্য ব্যবস্থাকে ধারণ করে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন দেশের পতাকা উত্তলিত হয়েছিল, তা দেশের এই স্বল্পকালীন ইতিহাসে একাধিকবার অবনমিত হয়েছে। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে দেখা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের শহীদ রক্তে আঁকা বাংলাদেশকে গড়ে তোলাই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন। এই অর্জনেই কেবল বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি তার পরিপূর্ণতা লাভ করবে। আকিজ মাহমুদ শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করতে হবে– ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। গৌরবের ও গর্বের মাস। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে, সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং আত্মদানের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের বিজয় অর্জন করেছি। আমরা ভুলিনি আমাদের স্বাধীনতা এসেছিল রক্তসিক্ত পথে। এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে। মুক্তিযোদ্ধারা দেখেছিলেন সুন্দর একটি দেশের স্বপ্ন। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমরা উপলব্ধি করছি, আসলে আমরা এখনো স্বাধীন হইনি। অভ্যন্তরীণ কিছু দুষ্টচক্র এখনো আমাদের শোষণ করছে। সীমাহীন দুর্নীতি, নিরাপত্তাহীনতা, অশিক্ষা, কুসংস্কার এখনো আমাদের সমাজে বিদ্যমান। একদিকে দেশ যেমন উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে সামাজিক, রাজনৈতিক নানা বিষয় দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। আমরা যদি অতীতের সব প্রতিহিংসা, হানাহানি ভুলে জাতি, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নতুন দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করি, তাহলে সুন্দর একটি দেশ গড়া মোটেও কঠিন হবে না। আর এ কাজগুলোর জন্য তরুণ সমাজকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। তরুণরাই পারে বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সুন্দর দেশ হিসেবে গড়ে বিশ্বদরবারে নিয়ে যেতে। মোঃ আলমগীর হোসেন, শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ
বিজয় নিশানে আরও একবার শুদ্ধ হোক ধরণী– বাঙালির অর্জিত বিজয়, তার শতজনমের প্রত্যাশার ফসল, এক দাসত্বের পরিসমাপ্তি আর জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সূচনালগ্ন। দেশের দামাল ছেলেরা ১৯৭১ সালে ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশে যে নিশান উড়িয়েছিলে, কালের পরিক্রমায় বাঙালি অতিক্রম করেছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বছর ঘুরে মহামান্বিত জাতির দুয়ারে এসেছে জন্য আবারো বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, ১৬ই ডিসেম্বর। এই অর্জনের যথাযথ মূল্যায়নে দেশ থেকে দারিদ্র, ক্ষুধা, দুর্নীতিসহ সকল ব্যাধী দূর হোক। লাল সবুজের এই বিজয়ের নিশান বাংলার আকাশকে আরও একবার অলংকৃত করুক। বিশ্ব জানুক বাঙালির বিজয় অর্জনের সেই মহাকীর্তি। বিজয় দিবসের এই আগমনবার্তা দেশকে সমৃদ্ধির পথে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাক। বিজয় কেতনেই ধুয়ে যাক সকল গ্লানি, সকল অপারগতা। শাহিদা আরবী
ইংরেজি সাহিত্য বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
তরুণদের অগ্রণী ভুমিকা রাখতে হবে– বিজয় শব্দের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে এক অপার আনন্দের অনুভূতি, আর সেই বিজয় শব্দটি যখন আমার দেশ ও জাতির সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত তখন তা আলাদা অনুভূতির স্বাদ দেয়,যেখান থেকে পাওয়া যায় ত্যাগের শিক্ষা, দেশপ্রেমের অগাধ নিষ্ঠা, সামনের প্রতিকূলপথ চলার অপার শক্তি।১৯৭১ সালের গৌরবান্বিত সেই বিজয় আমাকে একজন বাঙ্গালী হিসাবে গর্বিত করে। মুক্তিযুদ্ধকে স্বচক্ষে দেখা হয়নি কিন্তু সেই বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস যখনই পড়ি তা যেন চোখের সামনে ত্যাগের ও দেশপ্রেমের এক মহিয়ান শক্তি হিসাবে সামনে পায়। এ গৌরব আমার একজন বাঙালি হিসাবে,একজন বাংলাদেশি হিসাবে। আমি সবসময় মনে প্রাণে চায় আমার দেশ সেই শক্তি ও সাহসে উজ্জীবিত হয়ে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত হোক এক আদর্শিক রাষ্ট্র হিসাবে।স্বাধীনতা যুদ্ধে যাদের অবদানে আমরা পেয়েছি সার্বভৌমত্ব একটি দেশ বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় তারা হয়ে থাক চিরস্মরণীয়,অমলীন। আমরা বীরের জাতি আর এই বীরত্বপূর্ণ ভাবমূর্তি আমাদের সকল নাগরিকের মনে ধারণ করা উচিৎ এবং তা থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।বিশ্ব দরবারে আমাদের গৌরবকে সম্মুনত রাখতে কাজ করতে হবে প্রত্যেকটা নাগরিককে নিজের অবস্থান থেকে সংঘবদ্ধভাবে।একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন “স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে তা রক্ষা করা কঠিন” আর এই কঠিন কাজকে সুন্দরভাবে করে বিশ্বের কাছে প্রমাণ করে দিতে হবে বাঙালি এক বীরের জাতি। এক্ষেত্রে আমি মনে করি তারুণ্যের দায়িত্ব অনেক বেশি, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধেও তারুণ্যের ভূমিকা ছিল বলিষ্ঠ। আর সেই সাহস ও অনুপ্রেরণা নিয়ে বর্তমান প্রজন্মের প্রত্যেক তরুণের প্রতি এক বিশাল দায়িত্ব তা হল আমাদের প্রাপ্ত স্বাধীনতাকে যথাযথ রক্ষা করে দেশ ও জাতির সুন্দর আগামী গড়া। লতিফা আক্তার চুমকি।
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ,ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়।
কুষ্টিয়া।