
গত ১০ মে’২২ ইং চট্টগ্রামভিত্তিক ‘দৈনিক পূর্বদেশ’ পত্রিকার ১ম পৃষ্ঠা ও ৭ নং পৃষ্ঠার ৩ নং কলামে ‘নেশায় মায়ের বাঁধা, নগরে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা’ শিরোনামে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যে তথ্যসংবলিত একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সংবাদ বিবরণীতে উল্লেখ করা হয় নিহত নাফিজুল আলম রিয়াদ (২১) নেশাগ্রস্ত ছিলেন এবং নেশা থেকে বিরত থাকতে মায়ের বকুনি শোনে তিনি আত্মহত্যা করেন! এই সংবাদের তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন নিহতের বড়ভাই নওশাদুল আলম রাকিব। তিনি দৈনিক স্বাধীন বাংলা ৭১ কে জানান, ভুলতথ্য সংবলিত এ সংবাদ আমাদের শোকাহত পরিবারকে আরও বেশি আহত ও পারিবারিক – সামাজিক মান ক্ষুণ্ণ করেছে! তিনি বলেন, নিহত নাফিজুল আলম রিয়াদ (২১) কোরানে হাফেজ শিক্ষার্থী ও নগরীর একটি বেসরকারি পলিটেকনিক্যাল কলেজে অধ্যয়নরত ছিলেন। তার সাথে নেশাদ্রব্যের নূন্যতম সম্পর্ক কভু ছিলোনা। খেলাধুলার প্রতি আসক্তি কমাতে ও পড়ালেখায় মনোনিবেশ করতে মা-বাবার শাসনে আবেগতাড়িত হয়ে করা রিয়াদের এই ভুল আমাদের পরিবারকে শোকে মুহ্যমান করে রেখেছে! এমতাবস্থায় এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভ্রান্তিকর সংবাদ কখনোই কাম্য নয়।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট সমাজকর্মী, স্বাস্থ্য গবেষক ও মানবাধিকার সংস্থা ‘র্যাডিকেল ইন্টার্ন্যাশনাল’র প্রতিষ্ঠাতা ও মুখপাত্র জনাব এস এম ইকরাম হোসাইন জানান, আমি বিশ্বাস করি সাংবাদিকতা মুক্ত বুদ্ধিচর্চার একটি উচ্চমার্গীয় স্থান; আর তাই প্রতিটি সাংবাদিককে হতে হয় ক্ষেত্রবিশেষে একেকজন বুদ্ধিজীবী, একেকজন গবেষক। যেকোন ইস্যুর অতল গহবরে পৌঁছে তিনি মূল রহস্যটা উদঘাটন করে জাতির সামনে তুলে ধরেন তার লেখনীর অমীয় শক্তি দিয়ে।
অথচ আজকাল দেখা যায় ইস্যু পেলেই তাকে টিস্যু বানিয়ে হুমড়ি খেয়ে কলম চালিয়ে হিরো বনে যেতে চান অনেকেই! কতিপয় সাংবাদিক ভাইদের এই চর্চা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।
তিনি বলেন, আত্মহনন কিংবা সুইসাইড কখনোই কাম্য নয়; কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে এর মাত্রা ইদানীং খুব ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হিসেব অনুযায়ী – দেশে প্রতিদিন গড়ে ২৯ জনের বেশি আত্মহত্যা করছেন। যাদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি! আর বর্তমানে এক্ষেত্রে বড় একটি ফ্যাক্টর হচ্ছে সোশ্যালমিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব।
‘বিষণ্নতায় যারা ভোগেন, তাদের মধ্যেই বেশিরভাগ আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে। কেননা, জীবন নিয়ে তাদের মধ্যে প্রচণ্ড নেতিবাচক ধারণা কাজ করে। ছেলেবেলা থেকে যাদের নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না তাদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা কাজ করে।’ একটি গবেষণার রিপোর্ট অনুযায়ী, আত্মহত্যাকারীদের দুই-তৃতীয়াংশই নিজেদের ইচ্ছা সম্পর্কে আগেই অন্যের কাছে (বন্ধু-বান্ধব) কম-বেশি তথ্য দেয়। সেসব তথ্য গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন এই মানবাধিকার কর্মী ও স্বাস্থ্য পরামর্শক।