
’ অাব্দুল্লাহ অাল লোকমান আরবি মাসসমূহের মধ্যে উম্মতে আহমদী (দরূদ)’র জন্য পবিত্র মাহে রমজান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, মর্যাদাপূর্ণ, মহিমামণ্ডিত এবং বরকতময় মাস। মাসটি এত বেশী বিশেষায়িত হওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কারণ হল, এ মাসকে আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামিন সিয়াম সাধনার মাস হিসেবে নির্বাচন করেছেন (যা বান্দার ‘তাজকিয়া তথা আত্মশুদ্ধি’ অর্জনে অন্যতম একটি মাধ্যম) এবং এ মাসেই তিনি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ পবিত্র কোরআন নাযিল করেছেন। এছাড়াও এ মাসে এমন একটি রজনী রয়েছে যে রজনীর নাম ‘শবে ক্বদর’। যাকে আরবিতে বলা হয় ‘লাইলাতুল ক্বদর’। এই রজনীর কারণে মাহে রমজানের ফজিলত আরো সুউচ্চ চূড়ায় আরোহিত হয়েছে। এই রজনীর মাহাত্ম্য-গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামিন মহাগ্রন্থ আল্ কোরআনে ঘোষণা দিয়েছেন এভাবে- ‘লাইলাতুল ক্বদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর’ অর্থাৎ হাজারো মাসের (নফল ইবাদতের) চেয়েও ক্বদরের রাত (ইবাদত করা) উত্তম। নিবন্ধের এ পর্যায়ে আমরা শবে ক্বদরের শাব্দিক পরিচয়, এর সময়কাল এবং মহিমামণ্ডিত এ রাতটি কীভাবে অতিবাহিত করা উচিৎ- এ বিষয়ে সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনার চেষ্টা করব। ইনশা-আল্লাহ্। ‘শবে ক্বদর’-এর মধ্যকার ‘শব’ ফার্সি শব্দ। অর্থ- রাত, রজনী ইত্যাদি। আরবিতে বলা হয়, ‘লাইলাতুল ক্বদর’। এর বাংলা অনুবাদ দাঁড়ায়- ‘মহিমামণ্ডিত রজনী’। তবে আমাদের দেশে ‘শবে ক্বদর’ নামেই অধিক প্রচারিত ও প্রচলিত এ রাত। যাই হোক, আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি রমজান মাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রজনী হল, শবে ক্বদর এবং এও জেনেছি যে, পবিত্র কোরআনের ভাষায় ‘এ রাতের মর্যাদা হাজারও রাতের চেয়ে উত্তম।’ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য- প্রায় সারাবিশ্ব ব্যাপী রমজান মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে পবিত্র শবে ক্বদর উদযাপন করা হলেও প্রকৃত পক্ষে শবে ক্বদর রমজান মাসের (শেষ দশকের) কোন রজনীতে সংঘটিত হয়- এ নিয়ে উলামায়ে কেরামের মাঝে যথেষ্ট মতানৈক্য রয়েছে। তবে একটি জায়গায় প্রায় সকল উলামায়ে কেরাম একমত যে, শবে ক্বদর রমজান মাসের শেষ দশদিনে বিজোড় রাতের যে কোন একরাতে সংঘটিত হয়। তৎমধ্যে ইমাম শাফেয়ী (রহ্.)’র মতে শবে ক্বদর সংঘটিত হয় ২১ রমদ্বান এবং ইমাম আবু হানীফা (রহ্.)’র মতে ২৭ রমদ্বান। পরন্তু উম্মুল মু’মিনিন হযরত মা আয়েশা সিদ্দিকা (রা.), হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) সহ আরো সাহাবায়ে রাসূল (দ.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের সূত্র অনুযায়ী অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের বিশুদ্ধ অভিমত হল, শবে ক্বদর রমজানের শেষ দশকে যেকোন বিজোড় রজনীতে সংঘটিত হতে পারে। দলিল হিসেবে নিম্নোক্ত হাদিসগুলো সংযুক্ত করা হল- ১। উম্মুল মু’মিনিন হযরত মা আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসূল (দ.) বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে ক্বদর তালাশ করো।’ [বোখারি শরিফ] ২। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাসূল (দ.)-কে বলতে শুনেছি ‘তোমরা লাইলাতুল ক্বদরকে রমজানের শেষ নয়দিন অথবা সাত দিন অথবা পাঁচদিন অথবা তিনদিন অথবা একদিন বাকি থাকতে তালাশ করবে।’ [তিরমিজি; মিশকাত-১৯৯১] অতএব একটি বিষয় সুস্পষ্ট যে, শবে ক্বদর রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতের কোন একটিতে সংঘটিত হয়ে থাকে এবং কোন রাতে সংঘটিত হয়- তা সুনির্দিষ্টভাবে অনুল্লেখিত। তদুপরি ক্বদরের রাতের গুরুত্ব-মর্যাদার ব্যাপারে উপরোল্লিখিত কোরআনের বাণী তো আছেই, সাথে রাসূলে খোদা (দ.)’র অসংখ্য হাদিসও বিদ্যমান। যেমন- রাসূলুল্লাহ্ (দ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সওয়াব প্রাপ্তির দৃঢ় বিশ্বাসসহ আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় লায়লাতুল ক্বদর যাপন করল, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হলো।’ [বোখারি ও মুসলিম শরিফাইন] রাসূল (দ.) অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন আমার উম্মতকেই শবে ক্বদর দান করেছেন। এর পূর্বে কোন উম্মতকে তা দেওয়া হয়নি।’ সুতরাং এমন ফজিলত-বরকতময় রাত যাতে আমাদের জীবন থেকে ছুটে না যায়, এরূপ নেয়ামত থেকে যাতে আমরা মাহরুম তথা বঞ্চিত না হই- সে বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক থাকা উচিৎ। তবে হ্যাঁ, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় নানান ব্যস্ততার মধ্যে প্রতিদিন বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করে ইবাদত-বন্দেগি করা সম্ভব না হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু শবে ক্বদরের মর্যাদা-ফজিলতের প্রতি আমরা যদি দৃষ্টি নিবদ্ধ করি তবে মাহে রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতসমূহে অন্তত এক ঘন্টা হলেও শবে ক্বদর তালাশের তরে ইবাদত বন্দেগিতে নিমগ্ন থাকা কষ্টসাধ্য হবেনা। কেননা অন্তত এক ঘন্টা করে হলেও যদি আমরা শবে ক্বদর তালাশে ব্যয় করি তবে শবে ক্বদরের নেয়ামত থেকে পুরোপুরিভাবে বঞ্চিত হবনা, ইনশাআল্লাহ্। এ পর্যায়ে আমরা আমাদের ইবাদতের সময়টা কীভাবে অতিবাহিত করব- সে বিষয়ে আলোচনায় আসা যাক। যেহেতু শবে ক্বদরে ইবাদত করার জন্য সুনির্ধারিত কোন আমল নেই, তাই আমরা বিভিন্ন ধরনের ফজিলতময় আমলের মাধ্যমে ইবাদত করতে পারি। যেমন- নফল নামায আদায়, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরিফ পাঠ, আপন আপন ত্বরিকতের শাজারা শরিফ পাঠসহ তওবা, ইস্তেগফার, জিকির ইত্যাদির মাধ্যমে ইবাদত করতে পারি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাহমাতুল্লিল আলামিন হুজুর পুরনূর (দ.)’র উপর দরূদ শরিফ পাঠ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত এমনকি আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া কবুল হওয়ার মৌলিক শর্তও বটে। তবে শুধুমাত্র নামাযের ‘দরূদে ইবরাহিমী’র উপর নির্ভর না করে অন্যান্য প্রচুর দরূদ শরিফ আছে যা আমরা পাঠ করতে পারি। এ প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত হাদিসদ্বয় উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক মনে করছি- ১। হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘নিশ্চয় বান্দার দোয়া-মোনাজাত আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঝুলানো থাকে, তার কোনো কিছু আল্লাহ্ পাকের নিকট পৌঁছে না- যতক্ষণ বান্দা তোমার নবির প্রতি দরূদ পাঠ করবে না।’ [তিরমিজি শরিফ] ২। হযরত রাসূলে পাক (দ.) ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন আমার সঙ্গী হওয়ার সবচেয়ে অধিক উপযুক্ত ওই ব্যক্তি, যে আমার প্রতি সবচেয়ে বেশি দরূদ পাঠ করে।’ [তিরমিজি শরিফ] উপর্যুক্ত হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, শবে ক্বদরের আমলসমূহ আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের দরবারে কবুল হওয়ার