
জীবন হলো অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ এর যোগফল। জীবন নদীর স্রোত এর মতো, মৃত্যু ব্যতীত কেউ জীবনকে থামাতে পারেনা। একটি একটি করে দিন মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে যায়; আর মানুষকে ভবিষ্যৎ এর দিকে এগিয়ে যেতে হয়।
প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে কিছু ঘটনা আছে, যে ঘটনা গুলো সবকিছুকে ছাপিয়ে স্মৃতি জগতে জ্বলন্ত হয়ে বেঁচে থাকে।
আমরা প্রতিনিয়ত অসংখ্য ঘটনার সম্মুখীন হয়ে থাকি, ঘটনা গুলোর মধ্যে কিছু ঘটনা কয়েকদিন পর ভুলে যাই, আবার কিছু আমরা চিরকাল মনে রাখি।
স্মৃতি বলতে সাধারণত আমাদের ফেলে আসা দিন গুলোর মধ্যে যে মুহুর্ত গুলো আমাদের মনের মণিকোঠায় আজীবন বেঁচে থাকে সেগুলো কে বুঝায়, যা কখনো ভুলা যায়না।
হাজারো স্মৃতিগুলোর মধ্যে স্কুল-জীবনের “প্রথম ও শেষ দিন”
আমাদের জন্য সবচেয়ে স্মরণীয় হয়। সেই দিনগুলো সাথে জড়িয়ে থাকে হাজারো মায়া-ভালোবাসা, দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা।
বিদ্যালয়ের প্রথম দিনটা যেন বাকি সবদিন থেকে একটু ভিন্ন হয়। সেদিন মনের গভীরে থাকে নতুন পরিবেশে সঙ্গে পরিচিত হওয়ার খুশি-উৎসাহ এবং নিজেকে নতুন পরিবেশে কিভাবে আবিষ্কার করবো সে ভয়। বাবা/মায়ের হাত ধরে প্রথম বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে প্রবেশ করা, শিক্ষক -শিক্ষিকাদের সামনে নিজের পরিচয় দিতে ভয়ে নিস্তব্দ হয়ে যাওয়া; নতুন পরিবেশ নতুন মানুষের ভিড়ে নিজেকে খুব অচেনা লাগা, ক্লাসে প্রথম দিনে খুব নিঃসঙ্গ অনুভব করা। ধীরে ধীরে শিক্ষক-শিক্ষকা, সহপাঠীদের সাথে পরিচয় হওয়া।তাদের আন্তরিকতা ও সঙ্গ পেয়ে সব নিঃসঙ্গতা দূর করা, যে মানুষগুলো কে কখনো চিনতাম না তাদের সঙ্গে মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে যাওয়া,
অল্প দিনে তাদের আপন করে নেওয়া, লেখাপড়া, খেলাধুলায় সহপাঠীদের সাথে মেতে উঠা।
একটা সময় এসে বিদ্যালয় আমাদের জন্য সবচেয়ে আপন হয়ে যাই, তখন বিদ্যালয়ে নিজেকে আর একা লাগেনা, অচেনা লাগেনা। বিদ্যালয়ের দালান এর প্রতিটি ইটের সঙ্গে, খেলার মাঠের সঙ্গে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিদ্যালয় আমাদের জীবনে একটা অপরিহার্য অংশ হয়ে দাড়ায়।
কিন্তুু সময় তো প্রবাহমান, সে কারো জন্য থমকে থাকবেনা।
দীর্ঘ দশ’টা বছর হাসি-খুশি, আনন্দ-বেদনা ও হাজারো স্মৃতি নিয়ে কখন যেন বিদ্যালয়ের প্রথম দিনটা শেষ দিনের পরিণত হয়ে যায় আমরা বুঝতেও পারিনা। শেষ দিনটা যেন সবচেয়ে কষ্টে দিন হয়ে দাড়ায়। যাদের একটা সময় চিনতাম না,শেষ দিন তাঁদের ছেঁড়ে যেতে হবে বলে, তাদের ছাড়া থাকতে হবে বলে কষ্ট হয়। শিক্ষক -শিক্ষকা, সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব ছেঁড়ে সেদিন যেতে মন চাইনা, ইচ্ছে করে বিদ্যালয়ের জীবনটা আবারো ফেলে আসা প্রথম দিন থেকে শুরু করতে।
একসময় বিদ্যালয়ে না যাওয়ার জন্য হাজারো কারণ খুঁজতাম, টিফিনে পালিয়ে আসতাম, পড়ালেখা থেকে সবসময় দুরে থাকার চেষ্টা করতাম, বিদ্যালয় জীবন শেষ হবার জন্য কতো প্রার্থনা করতাম। কখন কলেজে জীবন শুরু করবো সে আশায় প্রহর গুণতাম, ছুটির দিন আসলে কতো খুশি হতাম। কিন্তুু শেষদিন এসে ফেলে আসা দিনগুলো সবচেয়ে বেশি মিস করা হয়। বারবার ফিরে পাবার ইচ্ছা জাগে দিনগুলো।
বিদ্যালয়ের শুরুটা যেমন আনন্দের হয়, শেষটা তার চেয়ে বেশি বেদনাময় হয়। বাকি দিনগুলো কখনো বিদ্যালয় হতে বাড়ি ফিরতে কষ্ট হতোনা, খারাপ লাগতো না, কিন্তুু শেষ দিন বিদায় অনুষ্ঠানের শেষে সবাইকে বিদায় দিতে বুকের ভেতরটা কষ্টে কাতর হয়ে যায়।
বিদ্যালয়ের প্রথমদিনটা যেমন নিঃসঙ্গ অনুভব হয়েছিলো, শেষদিন তার চেয়ে দ্বিগুন নিঃসঙ্গ লাগে। শিক্ষা জীবন আমাদের জীবনে শ্রেষ্ঠ সময়। সময়ের ব্যবধানে আমার ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভাবে জ্ঞান অর্জন করে থাকি। কিন্তুু যতো জ্ঞান অর্জন করিনা কেনো! বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কাছে আমরা যে জ্ঞান অর্জন করি, যে শিক্ষা পাই তা আমাদের জীবনে সফল হবার সেরা হাতিয়ার।
বিদ্যালয়ে দশটা বছর আমরা যে শিক্ষা অর্জন করি, হাসি-খুশি, আনন্দ-বেদনা যা পাই, তা আমরা পৃথিবীর যে প্রান্তরে যাইনা কেনো আর খুঁজে পাইনা।
তাই অতীতে হাজারো স্মৃতির ভিড়ে বিদ্যালয়ের জীবনটা আমাদের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান ও স্মৃতিময় হয়ে থাকে আজীবন। বিদ্যালয়ের জীবন এমন এক স্মৃতি যা আমাদের প্রতিটা ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়ে, সেদিনগুলো মনে করে কখনো হাসি আবার কখনো বা কষ্ট পাই।
দিনগুলো যদি ফিরে পেতাম তাহলে সবচেয়ে খুশি আমরা হতাম, কিন্তুু প্রবল ইচ্ছা থাকার সত্ত্বেও আমরা তা আর ফিরে পাইনা।
কিছু কিছু স্মৃতি আমাদের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা যোগায়।
তার মধ্যে বিদ্যালয়ের জীবনটা সেরা।
জীবনের শেষ দিন পযর্ন্ত এই স্মৃতিগুলো স্মৃতিরপাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকে।
অনেক বেশি মনে পড়ে দিনগুলো, অনেক বেশি মনে পড়ে আমার সহপাঠীদের।
যে যেখানে থাকুক, ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক সে দোয়াই করি।
লেখা : মিশু