
জেলা প্রতিনিধি কুষ্টিয়া,
কুষ্টিয়ায় লায়ন রিফুল করিম নামের রোগীকে করোনা পজিটিভ ছাড়পত্র দিয়ে রেফার্ড করার পর ওই দিনই রোগীকে ঢাকা গিয়ে তার নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট এসেছে নেগেটিভ। কুষ্টিয়া থেকে ছাড়পত্র নিয়ে ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ওই রোগীর নমুনা পরীক্ষায় তিন বারই নেগেটিভ এলো অথচ কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল কর্তপক্ষ ছাড়পত্রে তাকে পজিটিভ বানিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দিলো…!
ফেসবুকে রোগী লায়ন রিফুল করিম এর আবেগময় স্ট্যাটাস থেকে…
গত ১৫ই জুলাই হঠাৎ জ্বর এল। একটু একটু শরীরটা ব্যাথা শুরু হল। ডাক্তারের সাথে কথা বলে ঔষধ খাওয়া শুরু করলাম। কিছুতেই জ্বর কমে না বরং ১০৪ জ্বর উঠতে শুরু করল। করোনা টেস্ট করলাম নেগেটিভ এলো। তারপর টাইফয়েড টেষ্ট করে রক্তে একটু টাইফয়েডের জ্যাম পাওয়া গেল। ডাক্তার ঔষধ ইনজেকশন দিতে শুরু করলো।নাপা,এইচ, সাপোসিটার নিলাম, কোনটাই কাজ হচ্ছেনা। সবাই আমাকে করোনা ভেবে মা ছাড়া কেউ কাছে আসে না। রানা ভাইকে যখন তখন ফোন করে বললে খাবার দাবার ঔষধ পত্র পাঠিয়ে দেয়।সব সময় ডাক্তারদের সাথে কথা হয় কিন্তু কোন ডাক্তার কাছে আসে না। মা সারাদিন রাত মাথায় পানি দিয়ে মুছে দিলেও জ্বর কমেনা। আমাকে সেবা করতে করতে মা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ১০৪ থেকে ১০৩ বা ১০২ উঠে নামে। এভাবে প্রতি চার ঘন্টা পর পর জ্বর আসা যাওয়া শুরু করল। ডাক্তার ইনজেকশনের ডোজ বাড়িয়ে দিল। শরীরে নানা রকমের সমস্যা শুরু হল। কাঁশি শ্বাসকষ্ট , শেষে নেবুলাইজার নিতে শুরু করলাম। পরিবারের মানুষ গুলো নিমেষেই পর হয়ে গেল৷ এক মা আমাকে ছাড়েনা। মা তো ৬৮/৬৯ বৎসর বয়স হয়েছে কী করবে বুঝতে পারছেনা। কোন কিছুতেই কোন কাজ হলো না। খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। হাতে স্যালাইন দিল। কুমারখালীর টেষ্ট গুলোর উপর ভরসা না করে কুষ্টিয়া সনো টাওয়ারের টেষ্ট করাতে গেলাম। সেই টেষ্ট এ ডেঙ্গু টাইফয়েড দুটোই ধরা পরল। একজন দালাল বললো এখনি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে আপনাকে অক্সিজেন দিতে হবে। মা এমনিতে অসুস্থ আর পারছেনা তারপর আবার মাকে খোকসা থেকে এনেএকটি এম্বুলেন্স করে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে দিল।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনা পর্যবেক্ষন কক্ষে রোগীদের সাথে আমাকে রাখলেন। কিছুক্ষন পর অক্সিজেন লাগিয়ে দিল। মা আমার পাশে সারারাত জেগে থাকেন ।মায়ের চোখে জল টলটল করছে। বেঁচে থাকব কীনা জানিনা। এত ভয়ংকর কক্ষ কখনো দেখি নাই। অনেক বড় বড় বিড়াল। চারিদিকে কমলা, মালটা,কলার চোচা,কোথাও ইদুর মরে আছে। কক্ষে তিরিশ জন রুগী জন্য ফ্যান চলে পাঁচটি। মাঝে মাঝে নার্সদেরদের চিৎকারে আরো বেশি অস্হির হয়ে যাচ্ছিলাম।
রাতে আমার পাশের বেডে মানুষটি মারা গেলেন। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি ভেবেছি তিনি যে আর নেই বুঝতে পারিনি। ভোরে জানালাম তিনি মারা গেছেন। কিছুক্ষন পর মরদেহ সরিয়ে ফেললো বেড পরিস্কার করার পর পর অরেক জন রোগী ঐ বেডে এলেন চার ঘন্টা যেতে না যেতেই তিনিও মারা গেলেন।
পরেরদিন বিকেলে পাশেই একজন চার বছর বয়সী ছোট্ট মেয়ে মারা গেল। রাতে আবার আমার মাথার অপর পাশে আরেক জন মারা গেল।
আস্তে আস্তে রুম ফাঁকা হতে শুরু হয়েছে।
আমিও চোখে দেখছি মৃত্যু গুলো
চোখ ভোরে পানি বের হতে শুরু করল।
আমিও যে মৃত্যুর পথ যাত্রী।
ভূল চিকিৎসায় আমি যে শেষ হয়ে যাচ্ছি.!
পরের দিন রাতে কুষ্টিয়া আর এম ওর সহযোগী এসে বললেন আপনারতো করোনা পজিটিভ । আপনাকে ঢাকা পাঠাতে হবে…! মা,কেকা আপা আরো অনেকেই এল কুষ্টিয়া আর এম আর আমাকে করোনা পজিটিভ লিখে ছাড়পত্র দিয়ে ঢাকাতে এম্বুলেন্স করে পাঠিয়ে দিল। ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ক্লেবিনে ভর্তি হলাম। কিন্তু রাতেই কুষ্টিয়ার ল্যাবয়ের রিপোর্ট নেগেটিভ এল।
সবাই অবাক হয়ে গেল কী করে
আর এম ও তাঁর হসপিটালের ছাড়পত্রে আমাকে কোভিড ১৯ পজিটিভ লিখে ঢাকা পাঠালো কী করে?
আমি তিন বার কোভিড ১৯ পরীক্ষা করেছি দুইবার কুষ্টিয়ার আর একবার ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বার নেগেটিভ এসেছে শুধু কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল কর্তপক্ষের ছাড়পত্রে আমাকে পজিটিভ বানিয়ে ঢাকায় পাঠিয়েছে।
এই কুষ্টিয়ার হাসপাতালের আর এম ও এত বড় ভূল কী করে করলো? প্রতিদিন কতজন মানুষ মারা যায় ? তার কোন হিসেব নেই। করোর কোন দ্বায়িত্ব বোধ নেই। কিছু বললে বললে অভিযোগ দেন দেখব। কী অপরিছন্ন হাসপাতাল। যেখানে রুগী গেলে বেশি সুস্থ হবে কী অসুস্থ বেশি হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সকল প্রচেষ্টা এই ডাক্তারগুলো নষ্টকরে দিচ্ছ।
যে হাসপাতালে উপর কুষ্টিয়া জেলা মানুষ গুলো আস্হা । সে আস্হা কী করে আমরা রাখবো…..! আমার বাবা মা কী এজন্য দেশ স্বাধীন করেছিল। নিজের চোখে যা দেখেছি তা ভূলতে পারছিনা। কোথায় আমাদের প্রশাসন? কোথায় আমার সাংবাদিক ভাই? একটু আমার কথা গুলো শোনেন। না হলে আরো বহু কুষ্টিয়া বাসীর এমন বিপদে পড়তে হবে?
কবে হবে এদের বিচার !
কবে হবে এর সমাধান….!
আমার মা আমার অসুস্থ হওয়া দেখে এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছে….!
আমি মায়ের পাশে থাকতে পারছি না….!বড় বিষ্ময় লাগে
এই বেঁচে থাকা..!
আমি তো মৃত্যু পূরী দেখে এলাম।
যেখানে এ পাশে ও পাশে জ্যান্ত মানুষ গুলো মুহুর্তে লাশ বলে ডাকছে।
কী অদ্ভুত..!
একই দেহ, একই মন
অথচ মুহুর্তে নাম বদলে দিচ্ছি।
লাশ! লাশ! লাশ.!
মাথা থেকে বালিশ কেড়ে নিচ্ছে। তখন আমারো অক্সিজেন চলছে ৪৮ ঘন্টা।
আমার চোখ বন্ধ… ভাবছি
যে কোন সময় আমাকে সবাই লাশ বলে ডাকবে..! সবাই আমার জন্য কাঁদবে…! চারিদিকে এত কান্না,
আমি কোন পাশ হয়ে ঘুমাবো মা?
দুই পাশেই যে লাশ।
বিড়াল আর মানুষের চিৎকার একাকার কান্না ।
হাজার ডাকলেও ডাক্তার নার্স কেউ তো আসেনা। তারা কোথায় যেন দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে যায় আগামী দিনের ভোরের অপেক্ষায় …!
সেখানে সুস্থ মানুষ গুলো যে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অসহায় বড় অসহায় মা..! আত্মীয় স্বজন প্রিয়জন কেউ পাশে নেই। এ